সঙ্গীত
রবিশঙ্কর জর্জ হ্যারিসন নিউইয়র্কে কনসার্টে
রবিশঙ্কর জর্জ হ্যারিসন নিউইয়র্কে কনসার্টে
রবিশংকর জর্জ হ্যারিসন ‘দি কনসার্ট ফর বাংলাদেশ’ পরিকল্পনার পূর্বে, বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে অনেক পত্রপত্রিকা ও নিবন্ধ পড়েছিলেন। রবিশঙ্কর চেষ্টা করেছিলেন বন্ধুকে বাংলাদেশের তৎকালীন পরিস্থিতি সম্পর্কে অবহিত করার। ফ্রান্স, জার্মানি, ইংল্যান্ড, নরওয়ে এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের পত্রপত্রিকায়, বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে প্রকাশিত লেখাগুলি হ্যারিসনের মনকে গভীরভাবে প্রভাবিত করে। বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের সমর্থনে ও সাহায্যার্থে রবিশঙ্করের ইচ্ছা ছিল ‘দি কনসার্ট ফর বাংলাদেশ’ আয়োজনের। সেই ইচ্ছার কথা বন্ধুকে জানালে হ্যারিসন প্রায় সঙ্গে সঙ্গে রাজি হয়ে যান।
রবিশঙ্কর জর্জ হ্যারিসন প্রথম পরিচয় লণ্ডনে
উনিশশো ছেষট্টি সালে লণ্ডনে দুই মহারথীর প্রথম দেখা হয়। রবিশঙ্করের সুরের মূর্ছনায় মুগ্ধ জর্জ ভারতে এসেছিলেন শুধুমাত্র তাঁর কাছে সেতার শিখবেন বলে। রবিশঙ্কর শুধু তাঁকে সেতারই শেখাননি তাঁর আধ্যাত্মিক জীবনকেও প্রভাবিত করেছিলেন। জর্জের সঙ্গে রবিশঙ্করের যোগাযোগ আন্তর্জাতিক মঞ্চে তাঁর জনপ্রিয়তাকে এক নতুন মাত্রা দিয়েছিল। বিশ্বের দরবারে ভারতীয় সঙ্গীতকে উচ্চাসনে বসিয়ে দেয়। উনিশসো ষাতষট্টি সালে মনটেরে পপ ফেস্টিভ্যালে টানা চার ঘণ্টা সেতার বাজিয়েছিলেন রবিশঙ্কর। উনিশশো উনষত্তর সালে উডস্টক ফেস্টিভ্যালের উদ্বোধন করেন তিনি। উনিশশো সালে বাজান কনসার্ট ফর বাংলাদেশে।
“রবিই প্রথম যিনি আমাকে মুগ্ধ করার কোনও চেষ্টাই করেননি বরং আমিই ওনাকে দেখে মুগ্ধ হয়েছিলাম”। মার্টিন স্করসিসের তথ্যচিত্র, ‘জর্জ হ্যারিসন: ‘লিভিং ইন দ্য মেটিরিয়াল ওয়ার্ল্ডে‘ রবিশঙ্করের সঙ্গে তাঁর প্রথম সাক্ষাতের কথা এভাবেই জানিয়েছিলেন বিটলস সম্রাট জর্জ হ্যারিসন। প্রথম সেই ঐতিহাসিক সাক্ষাত শুধুমাত্র দীর্ঘমেয়াদী বন্ধুত্বেই পরিণত হয়নি, রবিশঙ্করের মাধ্যমেই জর্জ হ্যারিসন পরিচিত হন ভারতীয় দর্শনের সঙ্গে যা পরবর্তীকালে তাঁর জীবনে অনেক পরিবর্তন এনেছিল।
স্করসিসের একটি তথ্যচিত্র প্রদশর্নী চলাকালীন একটি সাক্ষাতকারে জর্জের স্ত্রী অলিভিয়া হ্যারিসন বলেছিলেন, “রবির সঙ্গে জর্জের সাক্ষাত শুধু দু’জন পৃথক মানুষের সাক্ষাত ছিল না, দুটো পৃথক সংস্কৃতির সাক্ষাত ঘটেছিল সেদিন”। সেই তথ্যচিত্রের কিছুটা অংশ জুড়ে রবিশঙ্করও ছিলেন।
এক এক জায়গায় এক একজন নারীর প্রেমে পড়েছি, বলেছিলেন রবিশঙ্কর
রবিশঙ্কর জর্জ হ্যারিসন বাজিয়েছিলেন এক সাথে
দি কনসার্ট ফর বাংলাদেশ, কণ্ঠ: জর্জ হ্যারিসন, সুর ও কথাঃ জর্জ হ্যারিসন – পয়লা আগস্ট উনিশশো একাত্তর, সময় সন্ধ্যা সাতটা, স্থানঃ ম্যাডিসন স্কোয়ার গার্ডেন, নিউইয়র্ক, ইউএসএ – বাংলা দেশ / কাছে এসেছিল বন্ধু / চোখ জোড়া বিষণ্নতা ছাওয়া / বন্ধুর একটাই চাওয়া/তার স্বদেশের বেঁচে থাকা / বেদনা বুঝিনি আমি, জানি / চেষ্টা আজ বেদনা বোঝারই/তোমাদের কাছে আজ বলি / এসো কিছু জীবন বাঁচাই / বাংলা দেশ, বাংলা দেশ….এখনও কি বাড়াবে না হাত / চেষ্টা করো বুঝতে একবার / এ দুঃখ ঘোচাও বাংলার / বাংলা দেশ, বাংলা দেশ / …. নিদারুণ মর্মের পীড়ন / দয়া করে মুখ ফিরিও না / শুনতে চাই কণ্ঠ তোমাদের,/বলে উঠছো / আজ দুঃখ ঘোচাও বাংলার দুঃখ আজ ঘোচাও বাংলার / বাংলা দেশ, বাংলা দেশ / । বিশ্বখ্যাত বিটলস গায়ক জর্জ হ্যারিসন একাত্তরে ‘কনসার্ট ফর বাংলাদেশের‘ গানের স্মৃতিচারন করেছেন তাঁর আত্মজীবনী ‘আই মি মাইনে’।
রাশিয়ার মানুষ রবিশঙ্করকে সেতারের রাজা মনে করত
অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ করেছিলেন বব ডিলান, এরিক ক্ল্যাপটন, রিংগো স্টার, বিলি প্রেস্টন, রিওন রাসেল এবং সরোদিয়া উস্তাদ আলি আকবর খান। রবিশংকর তো ছিলেনই। তবলায় ছিলেন ওস্তাদ আল্লা রাখা খান আর তানপুরায় কমলা চক্রবর্তী। অনুষ্ঠানের শুরুতেই রবিশংকর সংক্ষিপ্ত বক্তব্যের মাধ্যমে সবার কাছে বাংলাদেশের পরিস্থিতি তুলে ধরেন। হাজার হাজার দর্শক-শ্রোতা সেদিন বিস্ময়াভিভূত হয়ে শুনছিলেন রবিশংকর ও জর্জ হ্যারিসনের কথা।
রবিশঙ্করের জন্ম বাংলাদেশে
‘দি কনসার্ট ফর বাংলাদেশের’ শুরুতেই রবিশঙ্কর বাজিয়েছিলেন বাংলাদেশের পল্লিগীতির সুরে বাঁধা ‘বাংলা ধুন’। কনসার্ট শেষ হয়েছিল জর্জ হ্যারিসনের গাওয়া অবিস্মরণীয় সেই ‘বাংলাদেশ বাংলাদেশ’ গান দিয়ে। অনুষ্ঠানের দু’দিন পর রবিশঙ্কর এক সাক্ষাৎকারে বলেছিলেন, ‘বাংলাদেশের পরিস্থিতি নিয়ে আমার যে অনুভূতি, তার পুরোটাই ব্যক্তি পর্যায়ের। এর কারণ, আমি নিজে একজন বাঙালি।’
প্রসঙ্গত রবিশঙ্করের পিতা শ্যাম শঙ্করের জন্ম বাংলাদেশের নড়াইলের নবগঙ্গা নদীতীরের কালিয়া গ্রামে। একবার দিল্লিতে তাঁর বাসভবনে একটি একান্ত আলাপচারিতায় তাঁকে বাংলাদেশের কথা মনে করিয়ে দিতে তিনি পিতৃ-জন্মভূমি কালিয়ার কথা বলেছিলেন। গভীর আবেগে সেদিন তিনি বলেছিলেন, উনিশশো চল্লিশ সালে দাদার (উদয় শঙ্কর) সঙ্গে ঢাকা ও চট্টগ্রামে অনুষ্ঠান করতে গিয়েছিলাম। নদীপথে যাওয়ার সময় কালিয়ায় নেমে মাথায় মাটির ছোঁয়া নিয়েছিলাম। সেদিন তিনি আরও বলেছিলেন, ঢাকা থেকে চট্টগ্রাম যাওয়ার পথে ব্রাহ্মণবেড়িয়ায় আদি বাড়ি হয়ে গিয়েছিলাম।
প্রসঙ্গতঃ উল্লেখযোগ্য উস্তাদ আলাউদ্দিন খাঁ-ও ব্রাহ্মণবাড়িয়ার মানুষ ছিলেন। এসব স্মৃতি রবিশঙ্কর সারা জীবন মনের গভীরে বহন করে চলেছেন।
বিনোদন
মোনালি বলেছিলেন তিনি বিবাহিত কিন্তু সত্যি কি তাই

জন্ম ০৩ নভেম্বর ১৯৮৫
কলকাতা পশ্চিমবঙ্গ ভারত
পিতা শক্তি ঠাকুর
মাতা মিনতি ঠাকুর
দিদি মেহুলি ঠাকুর
জীবন সঙ্গী মাইখ রিখটার (অসমর্থিত)
সাল ২০২০। একটি জনপ্রিয় সর্ব ভারতীয় সংবাদপত্রের পাতা। সে পাতায় ছাপা হয়েছিল মোনালির একটি সাক্ষাৎকার। ২০২০ সালে প্রকাশিত সেই সাক্ষাৎকারে মোনালি স্বীকার করেছিলেন যে তিনি বিবাহিত। তার তিন বছর আগে অর্থাৎ ২০১৭ সালে তিনি নাকি বিয়ে করেছেন। পাত্র এক সুইডিশ রেস্তোরাঁ মালিক। নাম মাইক রিখটার।
২০১৭ থেকে ২০২০। তিন বছর মোনালি তাঁর বিয়ে গোপন করেছিলেন। না কোন সংবাদ মাধ্যম। না কোন সমাজ মাধ্যম। কোথাও প্রকাশিত হয়নি মোনালির বিয়ের খবর। বিয়ের আংটি কখনও ভুলবশত ইনস্টাগ্রামে দেওয়া ছবিতে দেখা যেত। তার থেকে অনেকে মোনালির বিয়ের খবর জানতে উৎসুক থাকতেন। কিন্তু মাইক এবং মোনালি দুজনেই অত্যন্ত সফল ভাবে তাঁদের বিয়ের খবর গোপন রেখেছিলেন।
আরও পড়ুন: টিভি থেকে সিনেমা এবং রাজনীতি চিরঞ্জিত সবেতে সফল
এবার আসা যাক আর একটি জনপ্রিয় বাংলা সংবাদপত্রের প্রসঙ্গে। তারিখ ১ আগস্ট ২০১৭। সেখানেও ছাপা হয়েছিল মোনালির একটি সাক্ষাৎকার। শুরুতে বিয়ে নিয়ে প্রশ্ন করা হয়েছিল। কিন্তু মোনালি বিয়ের খবর অস্বীকার করেছেন। বলেছিলেন, ‘বিয়ে নিয়ে এত বাড়াবাড়ির কি আছে? বিয়ে হলে জানাবেন।’ এমন কি বয়ফ্রেণ্ডের নাম পর্যন্ত বলতে চাননি। কেন এত গোপনীয়তা, সেটা মোনানিই বলতে পারবেন।
মোনালি শক্তি ঠাকুরের ছোট মেয়ে। জন সমক্ষে প্রথম আবির্ভাব গায়িকা রূপে। অভিনয় তার পরে। বাংলা টেলিভিশন ধারাবাহিক ‘আলোকিত এক ইন্দু’তে প্রথম অভিনয়। মুখ্য চরিত্র ইন্দুবালার ভূমিকায়। এরপর অভিনয় করেছেন আরও দু-একটি টেলিভিশন ধারাবাহিকে। এক দিন রাজা সেন প্রস্তাব দিলেন তাঁর ছবিতে অভিনয়ের জন্য। ছবির নাম ‘কৃষ্ণকান্তের উইল।’ মোনালিকে, রাজা সেন ভ্রমরের চরিত্রে ভেবেছিলেন।
সঙ্গীত
লতাজির প্রথম পুজোর বাংলা গানের জন্ম রেস্তোরাঁয়

জন্ম: ২৮ সেপ্টেম্বর ১৯২৯
ইন্দোর, (বর্তমান মধ্যপ্রদেশ), ভারত
মৃত্যু: ৬ ফেব্রুয়ারি ২০২২
মুম্বই, মহারাষ্ট্র, ভারত
হেমন্ত মুখোপাধ্যায় ঠিক করলেন মহাদেবি ভার্মার লেখা ছোট গল্প ‘চিনি ফেরিওয়ালা’ নিয়ে ছবি করবেন। ‘হেমন্ত বেলা প্রোডাকশন’ ব্যানারে ছবির নাম ঠিক হল ‘নীল আকাশের নীচে’। নায়ক উত্তমকুমার এবং পরিচালক ভূপেন হাজারিকা। পরে অবশ্য পরিচালনার দায়িত্ব নিয়েছিলেন মৃণাল সেন এবং উত্তমকুমারের বদলে নায়ক হয়েছিলেন কালী বন্দ্যোপাধ্যায়। মহরতে ক্ল্যাপস্টিক দিতে লতা মঙ্গেশকর কলকাতায় এলেন। লতাজিকে অভ্যর্থনা জানাতে বিমানবন্দরে অনেকের মধ্যে হাজির হয়েছিলেন এইচ এম ভি-র পি কে সেন এবং গীতিকার পবিত্র মিত্র। তখন এইচ এম ভি-র সর্বময় কর্তা ছিলেন এই পি কে সেন আর গীতিকার পবিত্র মিত্র কোম্পানিতে বাংলা গানের সব কিছু দেখাশোনা করতেন। সেই সময় এইচ এম ভি-র তরফে বাংলা গান নিয়ে যে কোন সিদ্ধান্ত নেওয়ার দায়িত্ব থাকত এই দুজনের ওপর।
লতা মঙ্গেশকর জীবনের প্রথম পুজোর বাংলা গানের জন্য পুলক বন্দ্যোপাধ্যায়কে বেছেছিলেন
দমদম এয়ারপোর্টে সকলের অগোচরে গীতিকার পুলক বন্দ্যোপাধ্যায়কে ডেকে লতা মঙ্গেশকর বললেন, ‘আমার জীবনের প্রথম পুজোর বাংলা গান রেকর্ড করব।’ সঙ্গীত সম্রাজ্ঞীর সঙ্গে দেখা করতে বহু গুণীজন উপস্থিত হয়েছিলেন। লতাজি প্রত্যেককেই বলছিলেন, ‘কাল মহরত, পরশু ফিরে যাব।’ টানটান কর্ম ব্যস্ততা অথচ পুলক বন্দ্যোপাধ্যায়কে বলেছেন, গান রেকর্ডিং করবেন। কিন্তু কি করে সেটা সম্ভব? রেকর্ডিঙের সময় কোথায়? পরদিন মহরত অনুষ্ঠানের এক ফাঁকে পুলকবাবুকে ডাকলেন। বললেন, ‘সবাই জানে আমি হোটেলে আছি। আমি কিন্তু আছি ভূপেনদার টালিগঞ্জের গল্ফ ক্লাবের ফ্ল্যাটে। আপনি কাল সকালে চলে আসুন।’ এতক্ষণে পুলকবাবুর দুশ্চিন্তা কাটল। আগের দিন লতাজির প্রস্তাব শুনে বাঙালি গীতিকার বাবু তো প্রায় ভেবে বসেছিলেন যে সেটা নেহাত কথার কথা। বিখ্যাতরা তো ওরকম কথা বলেই থাকেন।
আরও পড়ুনঃ পুলক বন্দ্যোপাধ্যায় কেন গঙ্গায় ঝাঁপ দিয়েছিলেন
টালিগঞ্জের ফ্ল্যাটে পুলকবাবুকে দেখে লতা মঙ্গেশকর হাসতে হাসতে বলে ফেললেন, ‘জানেন তো এইচ এম ভি-র পি কে সেন কি বলেছিল?’ পুলকবাবু কিচ্ছু বুঝতে পারছেন না। তখন লতাজি খোলসা করে বললেন, ‘উনি তো রেকর্ডিঙে পবিত্রবাবুর কথা বলছিলেন। আমি আর ভুপেনদা দুজনেই বলেছি আপনার নাম।’ পুলকবাবু বিষয়টা বুঝলেন কিন্তু তাঁর খটকা তখন অন্য জায়গায়। লতাজিকে জানতে চাইলেন, ‘কিন্তু রেকর্ড করবেন কখন? আপনি তো আজই ফিরে যাবেন।’ লতাজি তখন আবার হাসতে হাসতে বললেন, ‘না, না আমি যাচ্ছি না। বুঝতেই পারছেন আমি থাকছি জানতে পারলে কলকাতার সব মিউজিক ডাইরেক্টর আর গীতিকার আমাকে গানের জন্য ধরবেন। কাকে ফেরাব বলুন! আপনার চিন্তা নেই। আমি রেকর্ডিং সেরে ফিরব।’ পুলকবাবু নিশ্চিন্ত হলেন।
লতাজির প্রথম পুজোর বাংলা গান ‘রঙ্গিলা বাঁশিতে কে ডাকে’
এবার ভূপেন হাজারিকার কারণে পুলকবাবু পড়লেন বিপাকে। ভূপেনবাবু বললেন, ‘আমার কিন্তু সময় হবে না। তাছাড়া গানও তো তৈরি নেই।’ পুলকবাবু বললেন, ‘একটা গান তো আছে – মনে রেখো ওগো আধো চাঁদ’। কিছুক্ষণ থেমে ভূপেনবাবু বললেন, ‘আপনার লেখা ওই গানে সুর করেছিলাম, কিন্তু আমার তো একটুও মনে নেই। এখন যে বসব, তারই বা উপায় কোথায়? হারমোনিয়াম বিগড়েছে। সারাতে দিয়েছি, এখনও দিয়ে যায়নি।’ অগত্যা ভূপেনবাবুকে নিয়ে পুলকবাবু পৌঁছলেন তাঁর দিদির ভবানীপুরের বাড়িতে। ওখানে ‘মরশুমী ক্লাব’ নামে একটা ক্লাব ছিল। ভূপেনবাবু সে ক্লাবের সদস্য ছিলেন। ক্লাবে উত্তমকুমার, কবি সুভাষ মুখোপাধ্যায়, হেমন্ত মুখোপাধ্যায়, সুধীরলাল চক্রবর্তী প্রমুখ সবাই আসতেন।
ভূপেনবাবুকে নিয়ে আসার উদ্দেশ্য ছিল ক্লাবের হারমোনিয়ামে নতুন করে ‘মনে রেখো ওগো আধো চাঁদ’ গানটাতে সুর করানো। ভূপেনবাবু কিছুক্ষণ সুর নিয়ে নাড়াচাড়া করতে করতে হঠাৎ বলে উঠলেন, ‘অসম্ভব। আর বসতে পারব না। আমার জরুরী অ্যাপয়েন্টমেন্ট আছে। আমাকে বেরোতে হবে।’ পুলকবাবু কি আর করবেন? ভূপেনবাবুর সাথে তিনিও বেরিয়ে পড়লেন। দুজনে পৌঁছলেন চৌরঙ্গিতে। পুলকবাবু কিছুক্ষণ এদিক-ওদিক ঘুরে হাজির হলেন চাংহুয়া রেস্তোরাঁতে। শুনেছিলেন ভূপেনবাবু ওখানে আসতে পারেন। কপাল ভাল। ভূপেনবাবুকে পেয়েও গেলেন।
আসলে পুলকবাবুর ওখানে যাওয়ার উদ্দেশ্য ছিল ভূপেন হাজারিকার একটা অসমিয়া গানের সুরের ওপরে একটা বাংলা গান লেখা। পুলক বন্দ্যোপাধ্যায়ের দৃঢ় বিশ্বাস ছিল নতুন গান তিনি তখনই লিখতে পারবেন এবং লতাজি গাইলে সে গান ভালই হবে। ভূপেনবাবু রাজি হলেন। এবার সমস্যা হল কাগজের। পুলক বন্দ্যোপাধ্যায়ের পকেটে কলম আছে, দরকার শুধু একটা কাগজ, যার ওপর তিনি গান লিখবেন। শেষে রেস্তোরাঁর খাওয়ার বিলের ওপর লেখা হল গান – রঙ্গিলা বাঁশিতে কে ডাকে। ভূপেন হাজারিকার সুরে পুলক বন্দ্যোপাধ্যায়ের কথায় লতা মঙ্গেশকর গাইলেন তাঁর জীবনের প্রথম পুজোর বাংলা গান।


