অলিম্পিক ২৪
ইতিহাস গড়লেন মনু জিতলেন দুই ব্রোঞ্জ গর্বিত দেশ

চার বছর আগের ঘটনা। অলিম্পিকের আসর বসেছিল জাপানের টোকিয়ো শহরে। যে মনু ভাকর এবার তামাম ভারতবাসীর চোখের মণি, সেবার সেই মনুর পিস্তল ভেঙেছিল। পিস্তল ভাঙার যন্ত্রণা বুকে নিয়ে মনু এসেছিলেন প্যারিসে। টোকিয়োতে অংশগ্রহণকারী সব শ্যুটার কিন্তু এবার অলিম্পিকে সুযোগ পাননি। কিন্তু মনু দলে জায়গা করে নিয়েছিলেন। পদক জয়ের স্বপ্ন টোকিয়োতে সফল হয়নি। কিন্তু প্যারিসে সত্যি হল। বারো বছরের খরা কাটল। ইতিহাস গড়লেন মনু জিতলেন দুই ব্রোঞ্জ গর্বিত দেশ। মনু নিয়মিত গীতা পড়েন। ১০ মিটার পিস্তল ইভেন্টের ফাইনালে ছিল প্রবল মানসিক চাপ। মনু বলেছেন, গীতার শিক্ষা তাঁর কাজে এসেছে।
কেমন ছিল এবার কোচ এবং ছাত্রীর সম্পর্ক?
টোকিয়ো অলিম্পিক শুরুর কয়েক মাস আগের ঘটনা। ইভেন্টে নাম দেওয়া নিয়ে কোচের সঙ্গে সম্পর্কে ধরেছিল চিড়। দীর্ঘ দিন যশপাল রানার সঙ্গে সম্পর্ক ছিল না। প্যারিসে আসার বছর খানেক আগে, জোড়া লেগেছিল ফাটল। কোচ-খেলোয়াড়ের অটুর সম্পর্ক, ভারতকে এবার প্যারিসে প্রথম পদক এনে দিয়েছে। কি নিয়ে সংঘাত হয়েছিল কোচের সঙ্গে?
আরও পড়ুন:মেসি রোনাল্ডোর পরে লামিনে ইয়ামাল কি নতুন ফুটবল হিরো
টোকিয়ো অলিম্পিকে দশ মিটার এবং পঁচিশ মিটার পিস্তল, দুই ইভেন্টে যোগ্যতা অর্জন করেছিলেন মনু। ভারতীয় শ্যুটিঙ ফেডারেশন চেয়েছিল, মনু দুটি ইভেন্টে অংশগ্রহণ করুক। কিন্তু মনুর বয়স যে কুড়ি পেরোয়নি। মনুকে যাতে বেশি চাপ নিতে না হয়, কোচ যশপাল চেয়েছিলেন মনু শুধু মাত্র দশ মিটারে অংশ নিক। পঁচিশ মিটারে অংশ নিক, রানার আর এক ছাত্রী, চিঙ্কি যাদব।
যশপাল কিন্তু এখনও মনে করেন, সেদিন তাঁর সিদ্ধান্ত ছিল একদম সঠিক। অত কম বয়সে, একের বেশি ইভেন্টে নামলে, পদক পাওয়ার সম্ভাবনা কমে যায়। মনুকে বলা হয়েছিল, তিনি চান চিঙ্কি নামুক পঁচিশ মিটারে। যদিও মনুকে বলা হয়নি, যশপাল তাঁর ভালোর জন্য এই সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। কিন্তু মনু কোচের সিদ্ধান্তে সন্তুষ্ট হতে পারেননি।
মনুর ফ্যান? আসুন, মনু সম্পর্কে আরও কিছু জেনে নিন
মহিলাদের একক দশ মিটার এয়ার পিস্তল এবং দশ মিটার মিক্সড এয়ার পিস্তল। এই দুটি ইভেন্টে দুই দিনে দুটি ব্রোঞ্জ জিতে, মনু ছুঁয়ে ফেলেছেন নর্ম্যান প্রিচার্ডকে। উনিশশো সালে ভারতীয় হিসাবে নর্ম্যান জিতেছিলেন দুটি পদক। এবার মনুর সামনে সুযোগ রয়েছে সেই প্রিচার্ডকে টপকে যাওয়ার। পঁচিশ মিটার এয়ার পিস্তলে, মনুর অংশ নেওয়া বাকি। যদি জিততে পারেন, সৃষ্টি হবে অনন্য এক কীর্তি।
ইতিহাস গড়লেন মনু জিতলেন দুই ব্রোঞ্জ একবার সিন্ধুর জন্য গলা ফাটিয়েছেন
একবার ভুয়ো প্রোফাইল খুলে, পি ভি সিন্ধুর জন্য লড়েছিলেন। মনুকে বলতে শোনা গিয়েছে, ”ভারতের ক্রীড়ার সেরাদের আমি জানি। আমার সময়ের পিভি সিন্ধু এবং নীরজ চোপড়াকে আমি চিনি। ওদের কঠিন পরিশ্রমের জন্য আমি ওদেরকে শ্রদ্ধা করি। একবার সিন্ধুর জন্য আমি ভুয়ো প্রোফাইল খুলে নেটিজেনদের সঙ্গে লড়েছিলাম। কয়েকজন সিন্ধুর বিরুদ্ধে বিদ্বেষমূলক মন্তব্য করেছিল। তাতে আমি এতটাই উত্তেজিত হয়ে পড়ি যে ভুয়ো অ্যাকাউন্ট খেলে সিন্ধুর হয়ে নেমে পড়ি।” মনু ভাকেরের এহেন স্বীকারোক্তির পরে সিন্ধু সোশাল মিডিয়ায় লিখেছেন, ”সুইটহার্ট। অলিম্পিকে দুটো পদক জয়ের ক্লাবে তোমাকে স্বাগত জানাই। আরও অনেক পথ অতিক্রম করা বাকি তোমার।”
মনু ভাকরের ইনস্টাগ্রাম অ্যাকাউন্ট
তবে এত ভালো খবরের সঙ্গে একটা খারাপ খবর আছে। পদক জেতার পরে মনুকে নিতে হয়েছে আইনি ব্যবস্থা। কারণ যা ঘটেছে তা সম্পূর্ণ নিয়ম বহির্ভূত। আসলে মনুর এই কৃতিত্বের জন্য তাঁকে অভিনন্দন জানিয়েছে বিভিন্ন কর্পোরেট ব্র্যাণ্ড। এই সব কর্পোরেট ব্র্যাণ্ড বিনা অনুমতিতে তাদের বিজ্ঞাপনে মনুর ছবি ব্যবহার করেছে বলেই রিপোর্ট।
দুই ব্রোঞ্জ জয়ী মনুকে আইনি সাহায্য় কেন নিতে হল?
মনুর ব্র্যাণ্ড ম্যানেজমেন্টের দায়িত্বে রয়েছে আইওএস স্পোর্টস অ্যাণ্ড এন্টারটেন্টমেন্ট। সংস্থার ম্যানেজিং ডিরেক্টর নীরব তোমার, এক সর্বভারতীয় দৈনিককে জানিয়েছেন, ‘প্রায় ২৪টি ব্র্যাণ্ড মনুকে সোশ্যাল মিডিয়ায় শুভেচ্ছা জানিয়েছে তাঁর ছবি ব্যবহার করে। এই ব্র্যান্ডগুলির সঙ্গে মনুর কোনও চুক্তি নেই। এটা সম্পূর্ণ অনৈতিক।
মনুর ঘটনা কোন বিচ্ছিন্ন ঘটনা নয়। একাধিক কর্পোরেট ব্র্যাণ্ড প্যারিস অলিম্পিক্সে একাধিক অ্যাথলিটের সঙ্গে এই কাজ করেছে। বেসলাইন ভেঞ্চার্সের মুখপাত্র জানিয়েছেন, ‘যেসব ব্র্যাণ্ড আমাদের ক্রীড়াবিদদের স্পনসর করে না, তারা আইনত তাঁদের ছবি বিজ্ঞাপনে ব্যবহার করতে পারে না।’ এই সংস্থা কাজ করে পিভি সিন্ধু, নিখাত জারিন ও ব্যাডমিন্টন তারকা জুটি সাত্ত্বিক সাইরাজ – চিরাগ শেট্টির সঙ্গে।
টোকিও অলিম্পিক্সের সময়েও প্রায় কুড়িটি ব্র্যান্ড এমন করেছিল। যে কারণে অ্যাডভার্টাইজিং স্ট্যাণ্ডার্ডস কাউন্সিল অফ ইন্ডিয়া ওরফে এএসসিআই সেই ব্র্যাণ্ডগুলির কড়া নিন্দা করে জানিয়েছিল, সংশ্লিষ্ট ব্যক্তি বা তার সার্বিক বিজ্ঞাপন নিয়ন্ত্রণ কারী সংস্থার অনুমতি না নিয়ে বিজ্ঞাপনে সেই ব্যক্তির রেফারেন্স ব্যবহার করা যায় না। এরকম বিজ্ঞাপনে, পণ্যের সম্ভাব্য ক্রেতা সাধারণের উপর অযৌক্তিক প্রভাব বিস্তার করা হয়।
