Connect with us

দেশ

ফিরে দেখা কলকাতা ১ঃ শারদোৎসব পর্ব ১ Durga Puja and Kolkata 1

Published

on

 

Kolkata is famous for durga puja
Photo Credit: Google
থিমের হাত ধরে দুর্গা পুজো বহু দিন ধরেঅত্যাধুনিক। এক সময় বাংলার শহরে-গ্রামে এত সর্বজনীন পুজোর ছড়াছড়ি ছিল না। ব্রিটিশ বিরোধি আন্দোলনের প্রস্তুতির আদর্শ ক্ষেত্র রূপে বৃহত্তর পরিসরে জনসংযোগ বাড়াতে বারোয়ারি বা সর্বজনীন পুজোর প্রবর্তন হয়। মুলত দেবি দুর্গাকে মাথায় রেখে দেশমাতা বা ভারতমাতা বা মাতৃভূমির জাতীয়তাবাদী ধারণা বিপ্লবের আকার নেয়। দেবি দুর্গার ভাবনা থেকে বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় বন্দে মাতরম গানটি রচনা করেন। নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসু সহ অন্যান্য অনেক বিল্পবী ও জাতীয়তাবাদী নেতা বিভিন্ন সর্বজনীন পুজোর সঙ্গে যুক্ত থাকতেন। এই রীতি অবশ্য এখনও চলছে। পশ্চিমবাংলার বহু রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব বহু জনপ্রিয় দুর্গাপুজোর সঙ্গে সক্রিয় ভাবে যুক্ত।স্বাধীনতার আগে, আশ্বিন মাসের শুক্লপক্ষে আয়োজিত, বাঙালির অন্যতম বিশেষ ধর্মীয় ও সামাজিক উৎসব, দুর্গা পুজো সীমিত থাকত কলকাতা এবং অন্যান্য জেলা শহরের ধনী পরিবারের চৌহদ্দিতে। পারিবারিক দুর্গা পুজোয় বেশি জোর দেওয়া হয় শাস্ত্রাচার পালনে। এই সময়ে পুজোর বাড়ি লোকজনে গমগম কর। জনশ্রুতি আছে মধ্যযুগে রাজশাহীর তাহিরপুরের রাজা কংসনারায়ণ ঐতিহাসিকভাবে বঙ্গদেশে সর্বপ্রথম মহা আড়ম্বরে শারদীয়া দুর্গাপুজা উদযাপন শুরু করেছিলেন।
শোভাবাজার রাজবাড়ি
Photo Credit: Google

 

বাংলার শেষ স্বাধীন নবাব সিরাজ, ১৭৫৭ সালে পলাশীর যুদ্ধে হেরেছিলেন৷ সেই যুদ্ধে ব্রিটিশদের যারা সহায়তা করেছিলেন তাঁদের মধ্যে অন্যতম ছিলেন রাজা নবকৃষ্ণ দেব৷ সিরাজের পরাজয়ের মধ্যে রাজা নিজের জয় খুঁজে পেয়েছিলেন আর সেই আনন্দে সে বছর নিজের বাড়িতে দুর্গাপুজো শুরু করেন৷ সে বছর পুজোর অন্যতম অতিথি ছিলেন লর্ড ক্লাইভ। এখনও সেই পরম্পরা মেনেই পুজোর আয়োজন হয় এখানে৷বাংলার শেষ স্বাধীন নবাব সিরাজউদ্দৌলা, ১৭৫৭ সালে পলাশীর যুদ্ধে হেরেছিলেন৷ সেই যুদ্ধে ব্রিটিশদের যারা সহায়তা করেছিলেন তাঁদের মধ্যে অন্যতম ছিলেন রাজা নবকৃষ্ণ দেব৷ সিরাজের পরাজয়ের মধ্যে রাজা নিজের জয় খুঁজে পেয়েছিলেন আর সেই আনন্দে সে বছর নিজের বাড়িতে দুর্গাপুজো শুরু করেন৷ সে বছর পুজোর অন্যতম অতিথি ছিলেন লর্ড ক্লাইভ। এখনও সেই পরম্পরা মেনেই পুজোর আয়োজন হয় এখানে৷ 

 

 

 

এখনও সেই পরম্পরা মেনেই পুজোর আয়োজন হয় এখানে৷ শিকাগো বক্তৃতার পর, এই বাড়ির নাটমন্দিরে, স্বামী বিবেকানন্দকে সংবর্ধনা দেওয়া হয়৷ শোভাবাজার রাজবাড়ি ছিল রাজা নবকৃষ্ণের আদি বাড়ি৷ পরে তিনি পোষ্যপুত্র গোপীমোহনকে এ বাড়িটি দান করেন। নিজে উঠে যান নতুন একটি বাড়িতে৷ নাটমন্দিরে বহু গুণীজনের সমাবেশ হত। বাড়ির মেয়েদের বাইরে আসার হুকুম ছিল না৷ অষ্টমীর দিনে চিকের আড়াল থেকে প্রতিমা দেখে তারা অঞ্জলি দিতেন৷ সারা দেশ থেকে আসতেন শাস্ত্রজ্ঞ ব্রাহ্মণ৷ কৃষ্ণা নবমী তিথি থেকে শুরু হত চণ্ডীপাঠ।  পাঠ শেষ হত মহাষষ্ঠীর দিন৷ কাশী থেকে ব্রাহ্মণরা এসে বেদ এবং রামায়ণ পাঠ করেন৷ একবার পুজোর বলির জন্য উৎসর্গীকৃত পশু আশ্রয় নেয় পরিবারের তৎকালীন কর্তা হিন্দুকুল চূড়ামণি রাধাকান্ত দেবের পায়ের তলায়৷ সে বছর থেকে পশুবলি বন্ধ হয়ে যায় শোভাবাজার বাড়িতে৷ তখনকার প্রথা মেনে আজও নানা ধরনের ভাজা আর মিষ্টি দিয়ে মায়ের ভোগ তৈরি হয়৷

 

ছাতুবাবু-লাটুবাবুর বাড়ি
 
Photo Credit: Google

 

বনেদি বাড়ির পুজো প্রসঙ্গে উত্তর কলকাতার বিডন স্ট্রিটের ছাতুবাবু-লাটুবাবুর পুজোর কথা আসবে না এমন হতে পারে না। ১৭৭০ সালে এ বাড়িতে দুর্গাপুজো শুরু করেন রামদুলাল দে। তৎকালীন কলকাতার অন্যতম ঐশ্বর্যশালী পরিবার ছিল রামদুলাল দের পরিবার। বাড়ির নাম রামদুলাল নিবাস। দাদু রামসুন্দর বিশ্বাসের হাত ধরে কলকাতায় এসে বিদেশি সংস্থায় মজুরের কাজ নিয়েছিলেন। পদোন্নতির পরে হলেন অ্যাকাউন্টিং ক্লার্ক। কাজে খুশি হয়ে মালিক মদনমোহন দত্ত তাঁকে নিজস্ব ব্যবসা শুরু করতে সাহায্য করেন। আমেরিকানদের সঙ্গে ব্যবসা শুরু করে, রামদুলাল তাদের কাছের লোক হয়ে ওঠেন। নিজের যোগ্যতায় দিন মজুরের জীবিকা থেকে, ধীরে ধীরে রামদুলাল দে হয়ে ওঠেছিলেন বাংলার প্রথম কোটিপতি ব্যবসায়ী। শোনা যায়তৎকালীন হিন্দু কলেজ (বর্তমানের প্রেসিডেন্সি বিশ্ববিদ্যালয়) তৈরিতে সব থেকে বেশি আর্থিক অনুদান দিয়েছিলেন এই রামদুলাল দে। রামদুলাল দের মত তাঁর দুই ছেলে আশুতোষ দে এবং প্রমথনাথ দের বৈভবও ছিল নজরকাড়া। পরবর্তী কালে এরা ছাতুবাবু-লাটুবাবু নামে পরিচিত ছিলেন। পুজোর আগে নীলকণ্ঠ পাখি ওড়ানো দেখতে মানুষ ভিড় করতেন। এখানে প্রতিমার পাশে থাকে পার্বতীর দুই সহচরী জয়া এবং বিজয়া। সিংহের জায়গায় থাকে ঘোড়া। প্রতিমার হাতে নেই কোন বীণা, হাত খালি থাকে।

ওয়েলিংটন স্কোয়ার চন্দ্র বাড়ি

অষ্টাদশ শতাব্দীর শেষ ভাগে নদিয়া থেকে কলকাতায় আগমন। স্বনামধন্য আইনজীবী, উত্তরপরুষ গণেশ চন্দ্র চন্দ্রের হাত ধরে দুর্গা পুজোর শুরু ১৮৭৭ সালে। ওয়েলিংটন স্কোয়ারের এই বাড়ির বর্তমান ঠিকানা ২৩ নির্মলচন্দ্র স্ট্রিট। গণেশ চন্দ্র চন্দ্রের নামে গণেশচন্দ্র এভিনিউ। গণেশ চন্দ্র চন্দ্রের পৌত্র নির্মল চন্দ্র ছিলেন বাংলার প্রথম সারির এক রাজনৈতিক নেতা। দেশবন্ধু চিত্তরঞ্জন দাসসুভাষচন্দ্র বসু সহ বহু রাজনৈতিক ব্যক্তি দুর্গা পুজোর সময় এ বাড়িতে আসতেন। শোনা যায়, এ বাড়িতে বিভিন্ন সময়ে মহাত্মা গান্ধীজওহরলাল নেহরুআবুল কালাম আজাদের মত প্রবাদপ্রতিম ব্যক্তিত্বের পা পড়েছিল।
এই বাড়ির অন্যতম কৃতি সন্তান প্রয়াত প্রাক্তন কেন্দ্রীয় মন্ত্রী প্রতাপ চন্দ্র চন্দ্র। একসময় তিনি নিজে বাড়ির পুজোর তদারকি করতেন। ঠাকুরদালানের জন্যও চন্দ্রবাড়ি বিখ্যাত। সেই যুগের প্রখ্যাত স্থপতি শ্রীশচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের নকশায় তৈরি এই বাড়ির ঠাকুরদালান। প্রচলিত বনেদি বাড়ির দালানের থেকে এই নকশা একটু ভিন্ন। পূর্বমুখি সদর দরজা দিয়ে বাড়িতে ঢুকে উত্তর দক্ষিণ আড়াআড়ি উঠোন। এই উঠোনের উত্তর দিকে ভারতীয় স্থাপত্যের রীতিতে তৈরি এই ঠাকুরদালান। সাবেকি একচালার ডাকের সাজের প্রতিমা। প্রতিমা একসময়ে বাড়িতে তৈরি হলেও এখন তা কুমোরটুলি থেকেই তৈরি করে আনা হয়। সপ্তমী, অষ্টমী এবং নবমীতে কুমারী পুজো হয়। ছাঁচি কুমড়ো বলি দেওয়া হয়।

ঠনঠনিয়া লাহা বাড়ি

ঠনঠনিয়া নামটি কানে এলে মনে আসে ঠনঠনিয়া কালি মন্দিরের কথা। লাহা বংশের বেশ কয়েকটি বাড়ি আছে এই ঠনঠনিয়াতে। এ অঞ্চলের প্রথম লাহা বাড়ি সম্ভবত ২ কর্ণওয়ালিশ স্ট্রিট (বর্তমানে বিধান সরণি)-এর বাড়িটি। এছাড়াও ২৩৩ কর্ণওয়ালিশ স্ট্রিট ১ বেচু চ্যাটার্জি স্ট্রিট ৭১ কৈলাশ বসু স্ট্রিট এবং ৫০এবি কৈলাশ বসু স্ট্রিটেও লাহাদের বেশ কিছু বাড়ি রয়েছে। চুঁচুড়া থেকে বাবা রাজীবলোচনের হাত ধরে কলকাতায় পা দিয়ে প্রাণকৃষ্ণ লাহা কলুটোলা স্ট্রিটে বাড়ি কেনেন। সুপ্রিম কোর্টের অ্যাটর্নি হাওয়ার্ডের অফিসে হেড রাইটারের চাকরি নেন। নুন আফিম রেশমের কাপড় সহ হরেক ধরনের ব্যবসা শুরু করেন। আফিমের ব্যবসা থেকে প্রভূত আয়ের মুখ দেখেন প্রাণকৃষ্ণ। হাতের মুঠোয় আসে ১৭ টি বিদেশি কোম্পানি। ১৮৪৭ সালে ব্যবসায় পতন আসে। সেই বছর প্রাণকৃষ্ণ অষ্টধাতুর দেবী মুর্তি পান, নাম জয়-জয় মা। আজও লাহাবাড়িতে এই জয়-জয় মায়ের পুজো হয়। তাঁর অবর্তমানে তাঁর তিন ছেলে দুর্গাচরণশ্যামাচরণ এবং জয়গোবিন্দের মধ্যে সম্পত্তি ভাগাভাগি হয়।
 
 

 

রাজীবলোচন না পুত্র প্রাণকৃষ্ণ না প্রপৌত্র দুর্গাচরণ, কার হাতে পুজো শুরু, তাই নিয়ে মত পার্থক্য আছে। লাহা পরিবারে দেবি পূজিত হন জগজ্জননী রূপে। কাঠামো পুজো হয় জন্মাষ্টমীর ২-৩ দিন পর। কাঠামোর মধ্যে একটি ছোট্ট মাটির গণেশকে পুজো করা হয়। পরে যখন বড় গণেশ তৈরি হয়তখন ছোট্ট গণেশটিকে বড় গণেশের পেটের মধ্যে ঢুকিয়ে দেওয়া হয়। সাবেকি একচালার প্রতিমা। এখানে দুর্গা দশভুজা নন। দুর্গা বসেন স্বামী শিবের কোলে। পুজোর কদিন অষ্টধাতুর জয় জয় মা-ও পুজিত হন ঠাকুর দালানে। পুজোর পর জয় জয় মাকে আবার ফিরিয়ে নিয়ে যাওয়া হয় ঠাকুর ঘরে। নিরঞ্জনের সময় দেবীকে নিয়ে যাওয়া হয় দড়িতে ঝুলিয়ে।
ভবানীপুর দে বাড়ি
কালের তালে পা মেলাতে মেলাতে, আধুনিকতাকে যতই আপন করি, বনেদি বাড়ির পুজো এখনও প্রচারমাধ্যমের কাছে অন্যতম দৃষ্টি আকর্ষণকারী। বাপ-ঠাকুর্দার পরম্পরা ধরে রাখতে বহু বনেদি বাড়িতে মা দুর্গার পুজো এখনও হয়। তবে সেখানে সাবেকিয়ানা এবং ঐতিহ্যের দেখা সেভাবে পাওয়া যায় না। আড়ম্বর বা জাঁকজমককে দূরে সরিয়ে রেখে গুরুত্ব পায় থিম। ভবানীপুরের দে বাড়ির দুর্গা পুজো এই প্রসঙ্গে খুব তাৎপর্যপূর্ণ। একটি জনপ্রিয় বাংলা দৈনিকের মতে, একশো আটচল্লিশ বছরের পুরানো এই পুজোয় দেবি, ব্রিটিশ দমনকারীর রূপে আবির্ভূত। উনিশ শতকের শেষের দিকের প্রেক্ষিত চিন্তা করলে, দেবির এই রূপ ভাবনা এক কথায় অনন্য. যা একই সঙ্গে ইতিহাস এবং সমাজকে আমাদের চোখের সামনে ফিরিয়ে আনে।
 
 

 

 
 

 

 
Continue Reading

দেশ

উৎপল কুমার বসু পুলিশ কমিশনারের কাছে ধমক খেয়েছিলেন

Published

on

উৎপল কুমার বসু

পুলিশ কমিশনারের প্রশ্নের উত্তর দিতে গিয়ে উৎপল কুমার বসু মহা ফাঁপরে পড়েছিলেন। রীতিমত ধমকে উঠেছিলেন দুঁদে পুলিশ কমিশনার পি কে সেন, ‘আপনি না কলেজের অধ্যাপক? ছেলে-ছোকরাদের ফিচলেমিতে কেন নিজেকে জড়ালেন?’ রীতিমত ধমকে উঠলেন দুঁদে পুলিশ কমিশনার পি কে সেন। ‘ছেলে-ছোকরারা অসামাজিক কাজ করেছে কি? ‘ছেলে-ছোকরারা অসামাজিক কাজ করেছে কি? তবে হ্যাঁ, এদের লেখাকে যেভাবে অশ্লীল এবং অসামাজিক বলে চিহ্নিত করার চেষ্টা চলছে তা আমি মানতে রাজি নই।’ ধমকানির উত্তরে এমন স্পষ্ট ভাষণ শুনতে পুলিশ কমিশনার তৈরি ছিলেন না।

উৎপল কুমার বসু পুলিশ কমিশনারের প্রশ্নের উত্তর দিতে গিয়ে মহা বিপত্তিতে পড়েছিলেন

তখন উনিশশো বাষট্টি সাল। সারা বাংলা জুড়ে এক অস্থির পরিস্থিতি। কথায় বলে, কবিরা সমাজ বদলাতে না পারলেও সমাজের প্রকৃত রূপকে লেখায় তুলে ধরতে পারে আর সেই থেকে নাকি সমাজ বদলায়। সমীর রায়চৌধুরি, মলয় রায়চৌধুরি, শৈলেশ্বর ঘোষ, দেবী রায়, শক্তি চট্টোপাধ্যায়, সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়, সন্দীপন চট্টোপাধ্যায়রা তাঁদের লেখা দিয়ে ঠিক এই কাজটাই করছিলেন, যাকে সমালোচক-তাত্ত্বিকরা ‘হাংরি আন্দোলন’ বলে অভিহিত করেন। এই আন্দোলনটি না ছিল কোন সংগঠিত আন্দোলন, না তাতে নিয়ন্ত্রণ ছিল এবং এর প্রকাশও ছিল বিক্ষিপ্ত।

আরও পড়ুনঃ রবীন্দ্রনাথের লেখা কবিতা অনর্গল মুখস্থ বলতেন সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়

জনৈক কবি সদ্য বিএ পাশ করেছেন আশুতোষ কলেজ থেকে। হঠাৎ সুযোগ আসে জিওলজিতে অনার্স নিয়ে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার। সেই পড়ার সুবাদে ফিল্ড ওয়ার্ক করতে পা পড়ে চাইবাসায়। আড্ডা মারার লোভে একদিন হাজির হলেন সমীর রায়চৌধুরির বাড়ি। নিয়মিত এই আড্ডায় উপস্থিত হতে হতে ক্রমশ শক্তি-সুনীল, সন্দীপনের সঙ্গে তরুন কবিও আন্দোলনে জড়িয়ে পড়লেন।

এমএসসি পড়ার শেষে জুটল আশুতোষ কলেজে প্রভাষকের চাকরি। ওদিকে প্রশাসন তখন যে কোন উপায়ে ভাঙতে চাইছে আন্দোলন। পুলিশের কর্তারা বেছে বেছে কবি, সাহিত্যিকদের সদর দপ্তরে ডেকে এনে হেনস্থা করছেন। তার থেকে তরুণ কবিও বাদ গেলেন না। পুলিশি জুলুমের চাপে, আদালতে তাঁকে বলতে বাধ্য করানো হয় যে আন্দোলনের সঙ্গে জড়িত কবি ও সাহিত্যিকরা অসামাজিক কর্মে লিপ্ত এবং তাঁরা অপরাধী। 

সুনীল, শক্তি, মলয় রায়চৌধুরিদের সাথে সাথে উৎপল বসুও হাংরি আন্দোলনে জড়িয়ে গিয়েছিলেন

প্রবল চাপের মুখে তরুণ কবি জবানবন্দী দিলেন, ‘আমি অবিবাহিত, আমার বয়স ২৮।১৯৬২ সন বা তার কাছাকাছি কোন এক সময়ে হাংরি পুস্তিকা আমার চোখে পড়ে। কলেজ স্ট্রীট কফি হাউস এই আন্দেলনকারীদের আড্ডা মারার জায়গা। তাদের অনুরোধে বিভিন্ন সময়ে হাংরি পুস্তিকায় গদ্য ও কবিতা লিখেছি। কোথা থেকে ছাপানো হত আর কে তার খরচ যোগাত আমি জানি না। ১৯৬৪ সনে আমি কুসংস্কার নামে একটা লেখার পাণ্ডুলিপি দিই। তারপর আমি দু’ মাসের জন্য ডালহৌসী চলে যাই এবং কলকাতা ফিরে আমি আলোচ্য পুস্তিকাটি দেখতে পাই। পরে ডাকযোগে একটা কপি পেয়েছি। আমি মনে করি, তাদের সাহিত্য আন্দোলন নৈতিকভাবে কলুষিত হয়ে গেছে এবং আমি হাংরি আন্দেলন থেকে নিজেকে আলাদা করে নিয়েছি।’

কলকাতায় কবি ও সাহিত্যিকদের নিয়ে যখন এভাবে টানাহ্যাঁচড়া চলছে, তখন আমেরিকার বিখ্যাত টাইম ম্যাগাজিনে হাংরি আন্দেলন নিয়ে একটি প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়। প্রতিবেদনটি আশুতোষ কলেজ কর্তৃপক্ষের নজরে আসে। কলেজ কর্তৃপক্ষ একটি কমিটি তৈরি করেন এবং সেই কমিটির সুপারিশ অনুযায়ী কলেজের প্রভাষকের চাকরি থেকে তরুণ কবিকে নির্বাসিত হতে হয়।

‘পিয়া মন ভাবে’ কাব্যগ্রন্থের জন্য আকাদেমি পুরস্কার পেয়েছিলেন উৎপল কুমার বসু

কবি থাকেন তাঁর নিজের খেয়ালে। আছেন সব কিছুতে, আবার কোন কিছুতেই নেই। ঘুরে বেড়ান আপন মনে। লিখতেই হবে এমন কোন বাধ্যবাধকতা নেই। তিনি বলেন, ‘মানুষের প্রবণতাই হচ্ছে আত্মপ্রকাশ করা। সে তাই কবিতা লেখে। কবিতা লিখেই আত্মপ্রকাশের চর্চা করতে থাকে। আত্মপ্রকাশের প্রবণতা না থাকলে হয়ত মানুষ আর কবিতা লিখবে না। কিন্তু আত্মপ্রকাশের আকাঙ্খা কি কোন দিন থেমে যেতে পারে?’

হাংরি আন্দোলন বাংলা ও সাহিত্যকে কতটা সমৃদ্ধ করেছে বা আদৌ সমৃদ্ধ করতে পেরেছে কি না, তা নিয়ে আলোচনা এখনও চলতে পারে। তবে হাংরি আন্দোলন ছেড়ে বেরিয়ে আসার জন্য, হোক না তা পুলিশের চাপে পড়ে, উৎপল কুমার বসুকে, সমালোচনা ও তিরস্কার, দুয়েরই আঘাত প্রবল ভাবে সইতে হয়েছিল। দু হাজার এগারো সালে সপ্তর্ষি থেকে প্রকাশিত ‘পিয়া মন ভাবে’ কাব্যগ্রন্থের জন্য দু হাজার চোদ্দ সালে কবিকে সাহিত্য আকাদেমি পুরস্কারে ভূষিত করা হয়।

Continue Reading

দেশ

বীরেন্দ্রকৃষ্ণের কণ্ঠে দেবী পক্ষের সূচনা হয়

Published

on

বীরেন্দ্রকৃষ্ণ ও মহালয়ার ভোর

মহালয়া একটি তিথি আরমহিষাসুরমর্দিনী একটি অনুষ্ঠান। দীর্ঘ দিন ধরে বাংলা এবং বাঙালির আকাশে, এই তিথি আর অনুষ্ঠান এক সমার্থক রূপ ধরে আছে। মহালয়ার ভোরে তর্পণের সঙ্গে সঙ্গে অনুষ্ঠান শোনাও যেন বাঙালির অবশ্য কর্তব্য হয়ে দাঁড়িয়েছে। সত্যি বলতে বীরেন্দ্রকৃষ্ণ ও মহালয়ার ভোর দিয়েই সূচনা হয় দেবীপক্ষের। তাঁর কণ্ঠের যাদুতে এখনও আপামর বাঙালি বিভোর হয়ে আছে।

বীরেন্দ্রকৃষ্ণ ও মহালয়ার ভোর দীর্ঘ সময় ধরে বাঙালির জীবনে এটাই সমার্থক হয়ে আছে

স্ত্রী একবার স্বামীকে প্রশ্ন করেছিলেন, স্তোত্রপাঠের সময়ে তোমার গলা ধরে আসে কেন? উত্তরে স্বামী বলেছিলেন, মা চণ্ডীকে তখন সামনে দেখতে পাই আমি।অনেকেই বলেন,চণ্ডীপাঠের আগে তিনি নাকি স্নান করে পট্টবস্ত্র পরে পুরোহিতের সাজে বসতেন। তবে তাঁর কন্যা বলেছেন, বাবাকে তিনি কখনও ঠাকুরকে একটি ধূপও দিতে দেখেননি।

আরও পড়ুনঃ বাংলা ও বাঙালির সব থেকে বড় আইকন মহানায়ক উত্তমকুমার

ঠাকুমা ভাল সংস্কৃত জানতেন। ঠাকুমার কাছেই সংস্কৃতের প্রথম পাঠ নিয়েছিলেন বীরেন্দ্র। প্রথম বার চণ্ডীপাঠ করেছিলেন দশ বছর বয়সে, রাজেন্দ্রনাথ দে’র বাড়িতে। অঙ্কে মন ছিল না। তবে স্মৃতিশক্তি ছিল প্রখর। ভাল আবৃত্তি করতে পারতেন। একবার এক প্রতিযোগিতায় বীরাঙ্গনা কাব্য ছিল আবৃত্তির বিষয়। চল্লিশ পাতার কবিতা মুখস্থ করতে হবে অথচ প্রতিযোগিতার তিন-চার দিন আগে পর্যন্ত ছেলের কোন তাগিদ নেইনির্দিষ্ট দিনে পৃষ্ঠা চারেক আবৃত্তি শুনে, বীরেন্দ্রকে থামিয়ে দেন, অতীব সন্তুষ্ট বিচারক। সেদিন প্রথম হয়ে বাড়ি ফিরেছিলেন বীরেন্দ্র।

পরশুরামের ‘চিকিৎসা সঙ্কট’ নাটক পরিচালনা দিয়ে বীরেন্দ্রকৃষ্ণের বেতার জীবন শুরু

চিত্রা সংসদনামে একটি ক্লাবে বৈদ্যনাথ ভট্টাচার্য ওরফে  বাণীকুমার, পশুপতি চট্টোপাধ্যায়, সত্য দত্ত, বিজন বসু, পঙ্কজ মল্লিক প্রমুখের সাথে বীরেন্দ্রও গানবাজনা, অভিনয় ইত্যাদি চর্চা করতেন। উনিশশো সাতাশ সালের ছাব্বিশে অগস্ট ডালহৌসির এক নম্বর গার্স্টিন প্লেসে একটি বেতার কেন্দ্র স্থাপন করে বোম্বের ইন্ডিয়ান ব্রডকাস্টিং কোম্পানি। নতুন বেতারকেন্দ্রে অনুষ্ঠান পরিচালনার দায়িত্বে ছিলেন নৃপেন মজুমদার। সহকারী রাইচাঁদ বড়াল ও রাজেন্দ্রনাথ সেন। তখন বাইরের দলও রেডিয়োয় অনুষ্ঠান করত। চিত্রা সংসদের সদস্যরা ঠিক করলেন, তাঁরাও বেতারে নাটক করবেন। পরশুরামের চিকিৎসা সঙ্কট’-এর নাট্যরূপ নিয়ে বীরেন্দ্র হাজির হলেন নৃপেনবাবুর সামনে উনিশশো আঠাশ  সালের একুশে অগস্ট বীরেন্দ্রকৃষ্ণের পরিচালনায় পরিবেশিত হল সেই নাটক। 

বিএ পাশ করে চাকরি নিয়েছিলেন ইস্ট ইন্ডিয়ান রেলওয়ে অফিসে। সময় পেলে চলে আসতেন রেডিয়ো অফিসে। শেষে রেলের চাকরি ছেড়ে বেতারের চাকরিতে যোগ দিলেন। কিছুদিন পরে আত্মপ্রকাশ হল বেতার জগৎ পত্রিকার। সাল উনিশশো ছত্রিশ জানুয়ারি ২৫, পত্রিকা প্রকাশের চার দিন আগে মারা গেলেন পঞ্চম জর্জ। সম্পাদকের ইচ্ছে পত্রিকা প্রকাশ করবেন পঞ্চম জর্জ সংখ্যা রূপেদায়িত্ব পড়ল বীরেন্দ্রর ওপর। ইম্পিরিয়াল লাইব্রেরি থেকে জর্জকে নিয়ে লেখা বইপত্তর জোগাড় করে প্রবন্ধ লিখেছিলেন বীরেন্দ্র। নির্দিষ্ট সময়ে বেতার জগৎ প্রকাশিত হয়।

উনিশশো বত্রিশের ষষ্ঠীর ভোরে বেতারে প্রথম প্রচারিত হয় ‘মহিষাসুরমর্দিনী’ গ্রন্থনা ও শ্লোক আবৃত্তিতে ছিলেন বীরেন্দ্রকৃষ্ণ ভদ্র

উনিশশো বত্রিশের ষষ্ঠীর ভোরে বেতারে প্রথম প্রচারিত হয়কালজয়ী অনুষ্ঠান মহিষাসুরমর্দিনী। গানে পঙ্কজ মল্লিক আর গ্রন্থনা ও শ্লোক আবৃত্তিতে বীরেন্দ্রকৃষ্ণ ভদ্র। অনুষ্ঠানের আগের রাতে আটটাটা নাগাদ শতরঞ্চি আর বালিশ নিয়ে চলে গেলেন বেতারকেন্দ্রে। কায়স্থ ঘরের ছেলে চণ্ডীপাঠ করবে, ভয় পেয়েছিলেন বেতার কর্তৃপক্ষ। তবে বাণীকুমার বলেছিলেন, ‘এটা শুধু বীরেনই করতে পারে, ও-ই করবে। অবশেষে এল সেই মাহেন্দ্রক্ষণ। যন্ত্রসঙ্গীতের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে আবেগকম্পিত কণ্ঠে বীরেন্দ্রকৃষ্ণ বলে উঠলেন, ‘‘আশ্বিনের শারদ প্রাতে বেজে উঠেছে আলোকমঞ্জীর…’’ পঙ্কজ মল্লিক হাত নেড়ে ইশারায় জানিয়ে দিলেন, ‘ঠিক আছে, চালিয়ে যাও।সেই শুরু…এখনও চলছে মহিষাসুরমর্দিনীসমগ্র বিশ্বের আর কোন বেতার কেন্দ্রে বিরামহীন এত বছর ধরে চলতে থাকা অনুষ্ঠানের এমন উদাহরণ আর একটিও নেই।

 

Continue Reading

দেশ

বিদ্যাসাগরকে সম্মান দিতে বাংলা চূড়ান্ত ব্যর্থ

Published

on

জন্ম: সেপ্টেম্বর ২৬, ১৮২০

বীরসিংহ, বাংলা, ব্রিটিশ ভারত

মৃত্যু: জুলাই ২৯, ১৮৯১

জীবন সঙ্গী: দীনময়ী দেবী

সংস্কৃত কলেজে বিদ্যাসাগর সহপাঠীর কাছে শঠতার শিকার হয়েছিলেন

সংস্কৃত কলেজের শিক্ষক জন মিয়র প্রতিযোগিতা আয়োজন করলেন পদার্থবিদ্যা বিষয়ে একশত সংস্কৃত শ্লোক লেখার। এক সহপাঠী ঈশ্বরচন্দ্রকে প্রস্তাব দিলেন, দুজনে পঞ্চাশটি করে শ্লোক লিখে পুরস্কারের অর্থ ভাগাভাগি করে নেবেন। নির্দিষ্ট দিনে সহপাঠী জানালেন, তার অংশের পঞ্চাশটি শ্লোক সে লিখতে পারেনি। তাই শুনে বিদ্যাসাগর নিজের লেখা পঞ্চাশটি শ্লোক ছিঁড়ে ফেললেন। ঈশ্বরচন্দ্র পরে জানতে পেরেছিলেন, সহপাঠী ছাত্রটি পুরো একশত শ্লোকই জমা দিয়েছে। ধূর্ত সহপাঠীর অভিপ্রায় বুঝতে ঈশ্বরের আর বাকি থাকল না। বিদ্যাসাগর পরের বছর অবশ্য পুরস্কার জিতে  নিয়েছিলেন।

সারা জীবনে বিদ্যাসাগরকে এরকম ঘটনার মুখোমুখি খুুব একটা কম হতে হয়নি। সমাজ,  পরিজন,পরিবারের থেকে আজীবন আঘাত পেয়েছেন। সাত ভাইয়ের মধ্যে তিন ভাই কম বয়সে মারা যায়। পিতা ঠাকুরদাস ঠিক করেছিলেন, কলকাতা ছেড়ে  কাশী বাস করবেন। বড় ছেলে ঈশ্বরের অনুরোধে মত পালটে সিদ্ধান্ত নিলেন বীরসিংহ ফিরে যাবেন। ছোট ভাই ঈশানচন্দ্র মত দিলেন, দেশে ফিরে সংসারী থাকার পরিবর্তে বাবার উচিত কাশী যাওয়া। যারপরনাই বিড়ম্বনায় পড়ে ঠাকুরদাস শেষে কাশী গেলেন। বাবার যাতে কাশীবাসে কোন অসুবিধা না হয়, তার জন্য বিদ্যাসাগর প্রায়ই কাশী যেতেন। জীবনভর এ কর্তব্য তিনি পালন করেছেন।

জীবনভর বিদ্য়াসাগর আত্মীয় পরিবার সবাইয়ের থেকে আঘাত পেয়েছেন

সংস্কৃত প্রেস ও ডিপজিটরির অধিকারের দাবিতে অগ্রজের সঙ্গে দীনবন্ধুর বিবাদ, আদালতে যাওয়ার উপক্রম হয়েছিল। যদিও শেষে তার নিষ্পত্তি হয় সালিশির মাধ্যমে। ভাই অন্যায্য দাবি করলেও দাদা কি পিছিয়ে থাকতে পারে! গোপনে দীনবন্ধুর স্ত্রীর হাতে টাকা দিয়ে আসতেন বিদ্যাসাগর। যদিও এক সময় বিষয়টি আর গোপন ছিল না।  

আরও পড়ুন: কি আশ্চর্য! বিদ্যাসাগরের বর্ণপরিচয় হুবহু নকল

দাদাকে অপমান করতে আর এক ভাই শম্ভুচন্দ্রও কম ছিলেন না। ক্ষীরপাইয়ের কেচকাপুর স্কুলের প্রধান পণ্ডিত মুচিরাম বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে কাশীগঞ্জের মনোমোহিনী দেবীর বিধবা বিবাহ থেকে, যে কোনও এক কারণে বিদ্যাসাগর নিজেকে সরিয়ে রেখেছিলেন। এই ঘটনার প্রেক্ষিতে বিধবা বিবাহের সূত্রপাত যাঁর হাতে, অগ্রজ সেই বিদ্যাসাগরকেই, শম্ভুচন্দ্র কাপুরুষবলে দোষ দিয়েছিলেন। ভাই বলেই হয়ত এমন সাহস দেখাতে পেরেছিল, নাহলে বিদ্যাসাগরের ঘোর বিরোধিদের মধ্যেও কেউ কোন দিন এমন সাহস দেখাননি।

জীবনে তিনি সব থেকে বেশি আঘাত পেয়েছিলেন পুত্র নারায়ণচন্দ্রের থেকে। পুত্রের কাজকর্মে তিনি এতটাই ক্ষুব্ধ হয়েছিলেন যে রীতিমত লিখিত আকারে ছেলের সংস্রব ও সম্পর্ক ত্যাগ করেছিলেন। মেট্রোপলিটন কলেজের অধ্যক্ষ,সেজো মেয়ে বিনোদিনীর স্বামী সূর্যকুমার অধিকারী, হিসাবের গরমিলের দায়ে ধরা পড়েছিলেন বিদ্যাসাগরের হাতে। সদুত্তর না দিতে পারায়, বিদ্যাসাগর তাঁকে অপসাহিত করে, বৈদ্যনাথ বসুকে নতুন অধ্যক্ষ নিযুক্ত করেছিলেন।  

বিদ্যাসাগর সমাজের প্রকৃত অবস্থান বুঝতেও ব্যর্থ হয়েছিলেন

স্ত্রী দিনময়ী দেবীর পক্ষেও এত বড় ব্যক্তিত্বের সঙ্গে খাপ খাওয়ানো কার্যত অসম্ভব ছিল। অনেক গবেষক যদিও এ নিয়ে বিদ্যাসাগরকেই দায়ী করেছেন, তবে বাস্তবে দেখা যায় স্ত্রীর জীবনের শেষ দিন পর্যন্ত বিদ্যাসাগর তাঁর ইচ্ছেপূরণের চেষ্টা করেছেন। মৃত্যুপথযাত্রী স্ত্রীর হাত ধরে,  ছেলেকে ক্ষমা করে দেওয়ার জন্য মায়ের প্রার্থনা পর্যন্ত স্বীকার করেছেন।

সতীদাহ রুখে দিয়ে রামমোহন যে সংস্কারের সূচনা করেছিলেন, তার পরিসমাপ্তির দায় নিজের কাঁধে তুলে নিয়েছিলেন বিদ্যাসাগর আইন পাশের পরে,  কালীমতী দেবীর সাথে শ্রীশচন্দ্র বিদ্যারত্নের আইনসম্মত বিধবা বিবাহে রামমোহনের ছেলে রমাপ্রসাদের ইচ্ছাকৃত অনুপস্থিতি তাঁকে সমাজের প্রকৃত অবস্থান সম্বন্ধে বোধোদয় করিয়েছিল। সেদিন থেকে শুরু করে আজ পর্যন্ত, এই বাংলা যে তাঁকে বুঝতে ও যোগ্য সম্মান দিতে  চূড়ান্ত ব্যর্থ, তার সূচনা সম্ভবত সেদিনই রচিত হয়েছিল। 

Continue Reading