বই
Fanny Hill Woman of pleasure নারী শরীরের এমন বর্ণনা?

‘আমি তার সামনেই জামাকাপড় ছাড়ছি।…আমাকে সব খুলে ফেলতে উৎসাহ দিচ্ছে। নিজেকে সম্পূর্ণ উলঙ্গ দেখে…এ এক নতুন অভিজ্ঞতা।…এমন ভাবে ওর হাত স্পর্শ করছে, চাপ দিচ্ছে..ওর হাত আরও নীচে নামছে..সে এবার আসল জায়গায় হাত দিচ্ছে… fanny Hill Woman of Pleasure থেকে একটি লাইন। একটি কিশোরী শরীরের এমন বর্ণনা, লেখা হয়েছিল আজ থেকে প্রায় পৌনে তিনশো বছর আগে, লিখেছিলেন জন ক্লিল্যান্ড, এক ইংরেজ সাহিত্যিক। বইয়ের সম্পূর্ণ নাম Fanny Hill : Memoirs of A Woman of Pleasure।
‘ফ্যানি হিল : মেমোয়ার্স অফ আ উওম্যান’ লণ্ডনে প্রথম প্রকাশিত হয় সতেরশো আটচল্লিশ সালে। পরের বছর প্রকাশিত হয় দ্বিতীয় খণ্ড। জন ক্লিল্যান্ড ছিলেন ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির কর্মচারী। সতেরশো উনত্রিশ থেকে সতেরশো চল্লিশ, তিনি বম্বেতে ছিলেন। সতেরশো একচল্লিশে লণ্ডনে ফিরে যান। আরও সাত বছর পরে ফ্যানি হিল প্রকাশিত হয়। সম্ভবত বম্বেতে থাকাকালীন ক্লিল্যান্ড এ লেখা লিখতে শুরু করেছিলেন।
Fanny Hill Woman of Pleasure quotes
বিশ্ব সাহিত্যের ইতিহাসে ফ্যানি হিলের মত উপন্যাস খুব কম আছে যা এত বার পুনর্মুদ্রিত হয়েছে। উনিশশো সত্তর সালের আগে উপন্যাসটির প্রকাশ আইনি স্বীকৃতি পায়নি। এই দীর্ঘ সময়ের মধ্যে ব্রিটেন থেকে আমেরিকা, ফ্রান্স এবং অন্যান্য বহু দেশে বইটির বেআইনি সংস্করণ ছাপা হয়। প্রথম প্রকাশের ঠিক এক বছর পরে ক্লিল্যাণ্ডকে গ্রেফতার করা হয়েছিল। অশ্লীলতার দায়ে প্রিভি কাউন্সিলের সামনে তাঁকে হাজির হতে হয়। সরকারি ভাবে প্রকাশ নিষিদ্ধ ঘোষণা করে বাজার থেকে উপন্যাসটি তুলে নেওয়া হয়। শেষ পর্যন্ত অবশ্য সব অভিযোগ কাটিয়ে উঠে, ধ্রুপদি সাহিত্যের মর্যাদায় উত্তীর্ণ হয়ে ফ্যনি হিল। পাঠক সমাজে উপন্যাসটি প্রভাব এত প্রবল ছিল যে লণ্ডনের বিশপ একবার ভূমিকম্পের জন্য বইটিকে দায়ী করেছিলেন।
প্লেটোর লেখা Symposium বইটিতে সক্রেটিস আর সমকাম এক সাথে বর্ণিত হয়েছে
ফ্যানি হিলের সব থেকে বড় বৈশিষ্ট্য, উপন্যাসটির ভাষা সম্পূর্ণ রূপে বিশুদ্ধ সাহিত্যের, কোন ভাবেই তার গায়ে বটতলা সাহিত্যের তকমা দেগে দেওয়া যায় না। অক্ষতযোনি ফ্যানি যখন এক কুৎসিত কামুক বেশ্যাসক্ত ইংরেজকে অনুনয় করছে তাকে রেহাই দেওয়ার জন্য, তখন বিকৃত উত্তেজনার বদলে পাঠকের অন্তর ব্যথায় টনটন করে ওঠে। ‘…সে আবার আক্রমণ করছে ফ্যানিকে, জাপটে ধরছে,…উরু দুটিকে নিরাবরণ করছে… ’ – ফ্যানির এমন দুর্দশা পড়ে পাঠকের মনে কাম নয়, জেগে ওঠে করুণা।
উপন্যাসটি মূলত ফ্যানির দুটি দীর্ঘ চিঠির উপর দাঁড়িয়ে। একটি চিঠি নিয়ে প্রথম খণ্ড, দ্বিতীয় চিঠি নিয়ে পরের খণ্ড। মাত্র চোদ্দ বছর বয়সে, বাবা-মাকে হারিয়ে, ল্যাঙ্কাশায়ারের একটি গ্রামের মেয়ে ফ্যানি, ক্রীতদাসীর চাকরির খোঁজে লণ্ডন শহরে পৌঁছয়। সেখানে তাকে ফুঁসলে নিয়ে যাওয়া হয় একটি পতিতালয়ে যেখানে তার সঙ্গে চার্লসের পরিচয় হয়। চার্লসের প্রেমে পড়ে যায় ফ্যানি।
Fanny Hill : Memoirs of A Woman of Pleasure এমন উপন্যাস বিশ্ব সাহিত্যে খুব বেশি নেই
উপন্যাসের প্রথম খণ্ডের পাতায় পাতায় বর্ণিত হয়েছে চার্লস ও ফ্যানির প্রেমের সম্পর্ক। কখনও তা পৌঁছেছে কবিতার ভাষায়। ‘…চার্লস আমাকে দেখতে লাগল। আমার শরীরের সব ঐশ্বর্য তার দৃষ্টি ধীর ধীরে উপভোগ করছে। তার হাত দুটি একই সঙ্গে ব্যস্ত আমার শরীরের সর্বত্র।…আমার তাজা সুঠাম অবয়ব, আমার অঙ্গের নিজস্ব ভঙ্গি-ছন্দ, সব কিছু যেন ওকে মন্ত্রমুগ্ধ করেছে। কিন্তু এই শরীরের ওপর দিয়েই তো কিছুক্ষণ আগে আমারই উৎসাহে ঘটে গেছে ওর প্রবল প্রবাহ। এখন ও চাইছে ব্যথা ও ক্ষতর জায়গাগুলোকে মায়াময় চোখ দিয়ে দেখতে।…কিছুক্ষণ পরেই আবার নতুন উদ্যমে শুরু হল ঝড়।’
ফ্যানি হিলের মত উপন্যাস বিশ্ব সাহিত্যে খুব বেশি নেই যার ভাষা, চরিত্রায়ন ইত্যাদি সব কিছু যৌনতার বর্ণনাকে নস্যাৎ করে সামগ্রিক ভাবে ক্লিল্যান্ডের সৃষ্টিকে অনেক উঁচু আসনে বসিয়েছে। পরবর্তী কালে ক্লিল্যান্ডের লেখা আরও দুটি উপন্যাস যথাক্রমে ‘দ্য সারপ্রাইজেস অফ লাভ’ বা ‘দ্য উওম্যান অফ অনার’ কিন্তু কখনও ‘ফ্যানি হিলের’ সমান উচ্চতায় উঠতে পারেনি।
আসলে লেখক ফ্যানিকে সাধারণ বেশ্যাদের তুলনায় এক অন্য অবস্থানে পৌঁছে দিয়েছিলেন যেখানে ফ্যানি, তার বেশ্যালয়ের যৌনকর্মের মধ্যে ব্যর্থতা বা অনুশোচনা বা হা-হুতাশ নয়, অনুভব করে এক চরম শারীরিক আনন্দ যার সঙ্গে এক অর্থে নারীর স্বাভাবিক ও ন্যায্য শরীরি মুক্তির কথাও অব্যক্ত হয়ে থাকে যা সেই সময়ের পাশ্চাত্য সমাজে ছিল কল্পনারও বাইরে। ‘আমার সুন্দর পুরুষটি তখন যেন আমার শরীরের সঙ্গে বিচিত্র প্যাঁচে পাকে-পাকে জুড়ে আছে, যাতে আমাদের শরীরের গোপন অন্দরমহল পরস্পরকে ছুঁতে পারে।…’
বই
স্বামী বিবেকানন্দ আহারে অনাহারে বিবেকানন্দ চর্চার আর এক দিক

স্বামী বিবেকানন্দকে এক ব্যক্তি প্রশ্ন করেছিলেন, আপনি এত লঙ্কা খান কেন? প্রশ্নটি নিতান্ত সাদামাটা। কিন্তু এই সরল সাদাসিধে প্রশ্নের সঙ্গে জড়িয়ে আছে স্বামী বিবেকানন্দ আহারে অনাহারে, স্বামীজিকে নিয়ে তথাকথিত এক অনালোকিত দিক।
স্বামীজি স্মৃতিচারণ করেছেন, ‘প্রাতঃকালে উঠিয়া গোপনে অনুসন্ধান করিয়া যেদিন বুঝিতাম গৃহে সকলের পর্যাপ্ত আহার্য নাই। সেদিন মাতাকে আমার নিমন্ত্রণ আছে বলিয়া বাহির হইতাম এবং কোনওদিন সামান্য কিছু খাইয়া কোনওদিন অনশনে কাটাইয়া দিতাম।’ এই প্রসঙ্গের রেশ খুঁজে পাওয়া যায় জনৈক ব্যক্তির প্রশ্নে। ‘স্বামীজি আপনি এত লঙ্কা খান কেন?’ উত্তরে স্বামীজি বলেছিলেন,‘মশাই চিরজীবনটা পথে পথে ঘুরেছি আর বুড়ো আঙুলের টাকনা দিয়ে ভাত খেয়েছি, লঙ্কাই তো তখন একমাত্র সম্বল ছিল।’
স্বামী বিবেকানন্দ আহারে অনাহারে এই আলোচনার শুরু হতে স্বামীজির অকাল পিতৃবিয়োগ দিয়ে
পিতা বিশ্বনাথ দত্ত ছিলেন কলকাতা হাইকোর্টের বিশিষ্ট আইনজীবি। তাঁর মতামত ছিল রীতিমত ব্যতিক্রমী। বলতেন, ‘ছেলেদের ভাল করে খাওয়াও দাওয়াও আর লেখাপড়া শেখাও। পুঁটলি বেঁধে অযথা টাকা রেখে যাওয়ার কোন দরকার নেই।’ নরেন্দ্রনাথ আর তাঁর ভাইয়েরা এই মতবাদেই ছোট থেকে মানুষ হয়েছেন। তবে বাবার অকালপ্রয়াণে সংসারে দারুণ বিপর্যয় নেমে এসেছিল। তীব্র অর্থকষ্টে পড়েছিল দত্ত পরিবার।
অথচ ছোটবেলায় এই মানুষটিরই খাওয়াদাওয়ার বহর কেমন ছিল তার একটা আঁচ পাওয়া যায় প্যারীমোহন মুখোপাধ্যায়ের ‘স্মৃতিতর্পণ’ গ্রন্থে। মেজো ভাই মহেন্দ্রনাথ দত্ত বলেছেন, ‘আমরা পাঁঠাওলাদের সঙ্গে বন্দোবস্ত করেছিলুম যে তার দোকানে যে কটা মুড়ো থাকবে আমাদের জন্য রেখে দেবে। তা দু-তিনটে দোকান ঘুরলে দুই চার আনায় দশ-বারোটা জোগাড় হত। সেই দশ-বারোটা পাঁঠার মুড়ো সের দুই আড়াই কড়াইশুঁটি একসঙ্গে ফুটিয়ে একটা তরকারি হত। বিকেলবেলা স্বামীজি আর আমি স্কুল থেকে এসে আমরা দু-জন ওই কড়াইশুঁটি দেওয়া মুড়োর তরকারি দিয়ে খান ষোল করে রুটি জলখাবার খেতাম। এরপর বিকেলের খেলা সাঙ্গ হলে রাত্রে এসে যে খিদে সেই খিদে। সমান পেট ভরেই খেতুম।’
আরও পড়ুনঃ খেতড়িরাজ না থাকলে, বিশ্বনাথ দত্তের পুত্র নরেন্দ্রনাথ ওরফে স্বামীজি কি বিবেকানন্দ হতে পারতেন?
স্বামী বিবেকানন্দের উনচল্লিশ বছর পাঁচ মাস চব্বিশ দিনের জীবনে ছিল বহু বিচিত্র অভিজ্ঞতা আর ধারাবাহিক উত্থান-পতন। তাঁর বাণী রচনা এবং পরিচিতদের স্মৃতিচারণ খুঁজে এমন বহু তথ্য পাওয়া যায় যা সত্যিই অভিনব। যেমন আহিরীটোলা ঘাটের কাছে স্বচক্ষে স্বামীজি দর্শনকারীর কথা, ‘স্বামীজির বাম হস্তে শালপাতার ঠোঙায় চানাচুর ভাজা বালকের মত উহা খাইতে খাইতে তিনি আনন্দে পথে অগ্রসর হইতেছেন।’
স্বামীজির জীবনে খাওয়াদাওয়ার বিচিত্র অভিজ্ঞতা আছে যেমন শালপাতার ঠোঙায় চানাচুর খাওয়া
শুধু নিজে নয়, সঙ্গীসাধীদেরও খাওয়াতে ভালবাসতেন। কখনও প্রিয় শিষ্যকে নির্দেশ দিয়েছেন, ‘দেখিস মাছের জুল যেন ঠিক বাঙালদিশি ধরনে হয়।’ কখনও স্বামী সারদানন্দকে বিদেশিদের খাওয়া শিখিয়েছেন, ‘ওরে…ডান হাতে ছুরি ধরতে হয় আর বাঁহাতে কাঁটা দিয়ে মুখে তুলতে হয়। অত বড় গরাস করে না, ছোট ছোট গরাস করবি।’
একবার চম্পাবতে স্বামী বিরজানন্দ পরিব্রাজকদের জন্য ভাত চাপিয়েছেন। ভাতের হাঁড়ির তুলনায় চালের পরিমাণ বেশি হয়ে যাওয়াতে ভাত সেদ্ধ হতে হতে হাঁড়ি উপচিয়ে যাওয়ার উপক্রম হয়। তখন স্বামীজি পরামর্শ দিলেন, ‘ভাতে খানিকটা ঘি ঢেলে দে আর হাঁড়ির মুখের সরাখানা উলটে দে।’ এক দিকে সমস্যার সমাধানও হল তেমনই অন্য দিকে তৈরি হয়ে গেল উপাদেয় ঘি-ভাত। অথচ শেষের দিকে এই মানুষিটকেই ক্ষুধা-তৃষ্ণায় কি ভীষণ কাতর হতে হয়েছিল। মহানন্দ কবিরাজের নির্দেশে প্রায় মাসাধিক কাল তাঁর জল পানে পর্যন্ত নিষেধ ছিল।
দেশের অর্থনীতির স্বার্থেও স্বামীজি খাওয়াদাওয়া নিয়ে ভাবতেন
অর্থনৈতিক দিক থেকে দেশের স্বনির্ভরতার প্রশ্নেও স্বামীজি খাওয়াদাওয়া নিয়ে ভাবতেন। তাঁর ভাবনা ছিল এরকম, ‘মুগের ডাল অড়র ডাল প্রভৃতিতে ইংলণ্ড ও আমেরিকায় একটা খুব ভাল ব্যবসা চলিতে পারে।…যদি ছোট ছোট প্যাকেট করে তার গায় রাঁধবার ডিরেকশন দিয়ে বাড়িতে বাড়িতে পাঠানো যায়…তো খুব চলতে পারে।’ প্রসঙ্গত উল্লেখযোগ্য পাঁউরুটি নিয়ে তার বেশ কৌতুহল ছিল এবং সেই সূত্রে আগ্রহী ছিলেন বেলুড় মঠের নিজস্ব একটি বেকারি খুলতে।
কোন রকম বাছবিচার না করে তাঁর খাদ্যাভ্যাস নিয়ে একবার কলকাতার হিন্দু সমাজে শোরগোল পড়ে গিয়েছিল। তার উত্তরে প্যারিস থেকে আলাসিঙ্গা পেরুমলকে চিঠি লিখেছিলেন, ‘যদি কোলকাতার লোকেরা চায় যে আমি হিন্দু খাদ্য ছাড়া আর কিছু না খাই। তবে তাদের বলো তারা যেন আমায় একজন রাঁধুনী ও তাকে রাখবার জন্য উপযুক্ত খরচ পাঠিয়ে দেয়।’
বই
সমকাম সক্রেটিস প্লেটোর সিম্পোজিয়াম বইতে এরা সব এক সাথে
ভাবা যায়, সমকাম সক্রেটিস প্লেটোর হাত ধরে এক সাথে এক জায়গায়! হ্যাঁ, বাস্তবে সেটাই হয়েছিল প্লেটোর লেখা একটি বইয়ের হাত ধরে। বইয়ের নাম ‘সিম্পোজিয়াম’। আড়াই হাজার বছর আগের গ্রিক সমাজের এক অনবদ্য প্রতিফলন রয়েছে এই বইতে। বইতে বলছে, ‘আগাথন’ নামে এক গ্রিক, জীবনে প্রথম ট্রাজেডি লিখে পুরস্কার পেয়েছে। সেই উপলক্ষে নৈশভোজের আয়োজন। সেখানে সক্রেটিস আমন্ত্রিত অতিথি। স্নান করে, ভাল পোষাক পরে, জুতো পায়ে সক্রেটিস হেঁটে চলেছেন রাস্তা দিয়ে। তাঁর গন্তব্য আগাথনের ডাকা নৈশ ভোজসভা যা আসলে একটি সিম্পোজিয়াম।
সমকাম সক্রেটিস প্লেটোর হাত ধরে জায়গা করে নিয়েছেন ইতিহাসের বুকে প্লেটোর লেখা বই সিম্পোজিয়াম তাই তো বলে
সেই একই রাস্তা ধরে হেঁটে চলেছেন খর্বাকৃতি এক সাধারণ মানুষ। নাম তার অ্যারিস্টোডিমাস। সক্রেটিসের ভক্ত। দূর থেকে মহামান্য সক্রেটিসকে দেখে এগিয়ে এসে প্রশ্ন করলেন, ‘চললেন কোথায়?’ সক্রেটিস তাঁর পথচলার উদ্দেশ্য বুঝিয়ে দিয়ে জনৈক ব্যক্তির কাছে জানতে চাইলেন, সে এই ভোজসভায় যেতে চায় কি না! সে তখন সক্রেটিসকে প্রশ্ন করে বসল, সে এক নিতান্ত সাধারণ মানুষ। এমন কিছু পরিচয় তার নেই যার গুণে সে, বিশিষ্ট ব্যক্তিদের নিয়ে আয়োজিত পার্টিতে যেতে পারে। তখন সক্রেটিস তাকে অভয় দিয়ে বলেছিলেন বিখ্যাত ব্যক্তিদের ভোজসভায় যে কেউ যেতে পারে। তাতে সংকোচের কিছু নেই।
আরও পড়ুনঃ প্রায় চার শতক আগে নারী শরীরের এমন বর্ণনা…..
সেকালে গ্রিস দেশে বিশিষ্ট অতিথিদের আমন্ত্রণ করে এরকম আলোচনাচক্র আয়োজন করা হত। সে সভায় যে শুধু গম্ভীর আলোচনা হত তা নয়, থাকত প্রচুর হই-হুল্লোড়ের ব্যবস্থা। মদ্যপানের সঙ্গে সঙ্গে থাকত, নাচ, গান, কৌতুক ইত্যাদি অনেক কিছু। ভবিষ্যৎ প্রজন্মের অনেক ভাগ্য যে সেদিন এক অতি সাধারণ মানুষ অ্যারিস্টোডিমাস সিম্পোজিয়ামে হাজির হয়েছিলেন সক্রেটিসের সঙ্গী হয়ে। তাই তো তার মুখ দিযে প্লেটোর লেখা বিখ্যাত গ্রন্থ সিম্পোজিয়ামে পুঙ্খানুপুঙ্খ বর্ণিত হয়েছে সেকালের গ্রিক সমাজের একটি বিশেষ দিক। উপস্থিত বিশেষ অতিথিদের গোপন জীবন তাদের কেচ্ছা-কেলেঙ্কারি বস্তাপচা নীতিবোধ সব উঠে এসেছে প্লেটোর লেখায়। ভোজসভায় কে না হাজির ছিলেন। দার্শনিক ফ্রিডাস, ব্যাঙ্গরচনায় পারদর্শী তুখোড় লেখক অ্যারিস্টোফেনস, আয়োজক আগাথনের সমকামী সঙ্গী পৌসানিয়াস এবং স্বয়ং সক্রেটিস।
প্লেটোর এই বই প্রাচীন গ্রিক সভ্যতার এক গুরুত্বপূর্ণ দলিল। আলোচনায় একে একে উঠে এসেছে তৃতীয় লিঙ্গ থেকে শুরু করে প্রেম এবং যৌনতার মসৃণ বর্ণনা এবং চুলচেরা বিশ্লেষণ। সমাজে উওম্যানাইজার পুরুষ যেমন আছে নিম্ফোম্যানিয়াকস নারীও তেমনই আছে। এই দুই ধরণের মানুষের মধ্যে প্রেমকে সরিয়ে দিয়ে বড় হয়ে দেখা দেয় তীব্র যৌনতা আর শরীরি আবেদন। এর বিপরীতে সমাজে সমকামী নারী বা লেসবিয়ানসরাও থাকে। হতে পারে একই লিঙ্গ তবে তাদের মধ্যে বিরাজ করে নির্ভেজাল প্রেম।
গ্রিস সিম্পোজিয়ামে গম্ভীর আলোচনার সাথে নাচ গান কৌতুক সব ব্যবস্থা থাকত এক ধরনের হুল্লোড়বাজির ব্যবস্থা
যৌনতা এখানে সর্বাধিক গুরুত্ব পায় না। সিম্পোজিয়ামে এমন নানাবিধ গুরুগম্ভীর বিষয়ে আলোচনা চলতে থাকে নিরন্তর। লেসবিয়ান নারীদের সঙ্গে একই রকম ভাবে তুলনা চলতে পারে দু’জন সমকামী পুরুষের মধ্যে গড়ে ওঠা অতি উন্নত মানের প্রেম। আবহমান কাল ধরে প্রেমের সম্পর্কের মধ্যে যে শারীরিক তত্ত্বকে, মানুষ বড় করে দেখেছে, তার বিরুদ্ধে যুক্তি খাড়া করে সিম্পোজিয়ামে বোঝানোর চেষ্টা হয়েছে যে প্রেমিক এবং প্রেমিকার মধ্যে পুরুষ কে নারী বড় কথা নয় বড় কথা হল শরীর বাদ দিয়ে নিখাদ প্রেম – তা সে হোক না পুরুষে-পুরুষে অথবা নারীতে-নারীতে। এই প্রেমকে বাঁচিয়ে রাখতে বিবাহ নামক সামাজিক বন্ধন অনিবার্য নয়।
সভার প্রথম থেকে শেষ পর্যন্ত সক্রেটিস মন দিয়ে শুনে চলেছেন প্রত্যেকটি বক্তৃতা। সর্বশেষ বক্তা তিনি নিজে। তাঁর কথা শুনতে সবাই উদগ্রীব। সক্রেটিস বলে চলেছেন, এবার চূড়ান্ত মদ্যপ অবস্থায় সভায় প্রবেশ করলেন আলসিবিয়াডিস। কোন রাখঢাক না করে, সরাসরি সর্বসমক্ষে ঘোষণা করলেন, তিনি সক্রেটিসের প্রেমে পড়েছেন। অতীতের একটি ঘটনার বিবরণ দিলেন। এক রাতে সক্রেটিস তাঁর বাড়িতে ছিলেন। তিনি সন্তর্পনে সক্রেটিসের বিছানায় ঢুকে, তাকে জাপটে ধরেছিলেন। তাঁর দুর্ভাগ্য সক্রেটিস সেই রাতে তাঁর প্রেমের আবেদনে সাড়া দেয়নি। সক্রেটিসের এমন ব্যবহারে তিনি অত্যন্ত অপমানিত বোধ করেছেন আর আজ সেই সব কথা সবার সামনে বলে নিজেকে হালকা করলেন। নৈশভোজে হাজির অতিথিগণ আকন্ঠ পান করতে করতে মন দিয়ে শুনছিল আলসিবিয়াডিসের বেদনাক্ত কাহিনী।
