বিনোদন
হৃষিকেশ বহিরাগত হয়েও বলিউডে জায়গা করে নিয়েছিলেন

জন্ম: ৩০ সেপ্টেম্বর ১৯২২
কলকাতা, বেঙ্গল প্রেসিডেন্সি, ব্রিটিশ ভারত
মৃত্যু: ২৭ আগস্ট ২০০৬
হৃষিকেশ মুখার্জি জন্মেছিলেন কলকাতা শহরে। এই বছর তাঁর জন্মশতবার্ষিকী। কেন তিনি এখনও এত প্রাসঙ্গিক। কারণ বলিউডে হিন্দি ছবির তুমুল দাপাদাপির মধ্যেও তিনি তাঁর তৈরি ছবিগুলিতে একটা সাবেক বাঙালিয়ানার ছাপ রাখতে পেরেছিলেন। আজকের দিনে দাঁড়িয়ে যা কল্পনাই করা যায় না। হৃষিকেশ মুখার্জির আগে, পরে এবং বর্তমানেও অল্প হলেও বেশ কিছু বাঙালি পরিচালক বলিউডে কাজ করেছেন। কিন্তু তাঁর কাজের স্বকীয়তা তাঁকে বাকিদের থেকে আলাদা করে রেখেছে।
জীবন যাপনে মধ্যবিত্ত ধ্যানধারণা এবং ছবি তৈরিতে আঁটোসাটো বাজেট হলেও দীর্ঘকায় মানুষটির চিন্তা এবং ভাবনা বেশ লম্বা লম্বা। বাজেট স্মল, তাই বাড়ির ড্রইংরুমকে সিনেমার সেট বানানো হল। কিছুক্ষণ পরে সেখান থেকে চেয়ার টেবিল সরিয়ে দিয়ে নিয়ে আসা হল আর এক সেট চেয়ার টেবিল। এবার এ ঘর হয়ে উঠল ছবির মূল চরিত্রের অফিস ঘর। আরও কিছুক্ষণ পরে, ফার্নিচার সরিয়ে ঢোকানো হল খাট অর্থাৎ ঘর বদলে বেডরুম হল। এমন উদ্ভাবনী ক্ষমতা সম্পন্ন মানুষটির শ্যালক ছিলেন আর্ট ডিরেক্টর। তাঁকে মাঝে মধ্যে এমন নানাবিধ হ্যাপা সামলাতে হয়। হঠাৎ পরিচালক হয়ত বলে বসলেন, ‘দুটো দেওয়াল চট করে রঙ করে দাও তো’। ছবির বাজেট কিভাবে ক্ষুদ্র থেকে ক্ষুদ্রতর করতে হয়, সেটা শিখতে হত এই মানুষটির কাছে।
আরও পড়ুনঃ হৃষিকেশ মুখার্জি এত ছবি করলেন কেন একটা বাংলা ছবি করলেন না
ঋষিকেশ মুখার্জি মানে ছবিতে থাকবে নিখাদ বাঙালিয়ানা
সিনেমায় হয়ত একটা গানের দৃশ্য শুট হবে। গানের মধ্যে আবার একটি নাটকও মঞ্চস্থ হওয়ার কথা। পরিচালক আর্ট ডিরেক্টরকে বললেন, ‘কিভাবে কম খরচে করা যায় ভাবো। একটা দু’মিনিটের গানের দৃশ্যের জন্য স্টুডিয়ো ভাড়া করতে পারব না।….’ আর্ট ডিরেক্টর অনেক ভেবে বাড়ির ছাদে শুটিঙের প্রস্তাব দিলেন। পরিচালক যেন হাতে চাঁদ পেলেন, ‘আরে এ তো ব্রিলিয়ান্ট আইডিয়া।’ যেমন ভাবনা তেমন কাজ। ছাদে জলের ট্যাঙ্ক, পাইপ আর খোলা জায়গা নিয়ে সম্পূর্ণআলাদা একটা আবহ তৈরি হল। শুধু দুটো বড় কাগজের কাটআউট আর কাপড় দিয়ে তৈরি করা হল মঞ্চ। সিনেমায় গানের দৃশ্যে, দর্শক দেখতে পেলেন একটা সুন্দর ঘরোয়া পরিবেশ। এমনই ছিলেন হৃষিকেশ মুখোপাধ্যায় আর সেই সিনেমার নাম ছিল ‘খুবসুরত’।
‘নমকহারাম’ ছবিতে গানের দৃশ্য শুট হবে। রাজেশ খান্না আর অমিতাভ বচ্চনের ডুয়েট। রাজেশ খান্না সুপারস্টার। তখনও এসে পৌঁছননি। অমিতাভ চলে এসেছেন। পরিচালক শুটিং শুরু করতে বললেন। সবাই অবাক! রাজেশ খান্না ছাড়া ছবি কি করে শুট হবে! ধমকে বললেন, ‘বলছি না শুরু কর! প্রথমে অমিতের বাঁ দিক থেকে ডান দিক ক্যামেরা যাবে, ওই একই লাইনে রাজেশকে শুট করার সময় ক্যামেরা ডান দিক থেকে বাঁ দিক যাবে। এরকম দু-তিনটে জয়েন্ট শট নিলেই কাজ হয়ে যাবে।’ সেভাবেই রোল করল ক্যামেরা। আর অসুবিধাকে মুহূর্তের মধ্যে সুবিধায় বদলে দিলেন এই অসামান্য মানুষটি।
ছিলেন বিমল রায়ের সহকারী, হৃষিকেশ মুখার্জি দীর্ঘ দিন গুলজারের সঙ্গে এক সাথে কাজ করেছেন
ছিলেন এডিটর। গুলজারের গুরুভাই। দুজনেই বিমল রায়ের সাথে কাজ করেছেন। গুলজার ছিলেন বিমলবাবুর অ্যাসিস্ট্যান্ট। পরবর্তী কালে নিজে পরিচালক হয়ে একের পর এক জনপ্রিয় ছবি উপহার দিয়েছেন। ‘নমকহারাম’, ‘গুড্ডি’, ‘গোলমাল’, ‘খুবসুরত’, ‘মুসাফির’, ‘চুপকে চুপকে’ বানিয়ে সারা দেশের নয়নের মণি হয়ে উঠেছিলেন হৃষিকেশ মুখোপাধ্যায়।
মানুষটির মধ্যে একটা শিশুসুলভ সত্ত্বা ছিল। বিমলবাবু হয়ত কাজের জন্য ডেকেছেন, তিনি হঠাৎ খুঁড়িয়ে হাঁটতে শুরু করলেন। পায়ে অবশ্য গাউট ছিল। তিনি খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে এগোচ্ছেন, এমন সময় ইউনিটের এক জন বলল, ‘গাউট তো বাঁ পায়ে, তবে আপনি ডান পা খুঁড়িয়ে চলছেন!’ সঙ্গে সঙ্গে তিনি পা বদলে বাঁ পা খুঁড়িয়ে হাঁটতে শুরু করলেন।
একটা তথ্যচিত্র বানানোর কাজে, হৃষিকেশ মুখোপাধ্যায় একবার লণ্ডন গিয়েছেন। সেখানে ভীষণ ঠান্ডা। তারই মধ্যে শুটিং করতে হবে। হৃষিকেশবাবু রোজ সবার আগে তৈরি হয়ে যান। তাঁর গা থেকে ভুরভুর করে সুগন্ধ ওড়ে। কি ব্যাপার, কেউ বুঝতে পারে না। পরে জানা গেল, তিনি রোজ রোজ চান করেন না। গায়ে বেশি করে পাউডার দিয়ে নিলেই নাকি তাঁর কাজ হয়ে যায়। বলেছিলেন, ‘পাগল যত, এই ঠাণ্ডায় রোজ কেউ চান করে? আয়ু ক্ষয়ে যাবে হে!’
বিনোদন
মোনালি বলেছিলেন তিনি বিবাহিত কিন্তু সত্যি কি তাই

জন্ম ০৩ নভেম্বর ১৯৮৫
কলকাতা পশ্চিমবঙ্গ ভারত
পিতা শক্তি ঠাকুর
মাতা মিনতি ঠাকুর
দিদি মেহুলি ঠাকুর
জীবন সঙ্গী মাইখ রিখটার (অসমর্থিত)
সাল ২০২০। একটি জনপ্রিয় সর্ব ভারতীয় সংবাদপত্রের পাতা। সে পাতায় ছাপা হয়েছিল মোনালির একটি সাক্ষাৎকার। ২০২০ সালে প্রকাশিত সেই সাক্ষাৎকারে মোনালি স্বীকার করেছিলেন যে তিনি বিবাহিত। তার তিন বছর আগে অর্থাৎ ২০১৭ সালে তিনি নাকি বিয়ে করেছেন। পাত্র এক সুইডিশ রেস্তোরাঁ মালিক। নাম মাইক রিখটার।
২০১৭ থেকে ২০২০। তিন বছর মোনালি তাঁর বিয়ে গোপন করেছিলেন। না কোন সংবাদ মাধ্যম। না কোন সমাজ মাধ্যম। কোথাও প্রকাশিত হয়নি মোনালির বিয়ের খবর। বিয়ের আংটি কখনও ভুলবশত ইনস্টাগ্রামে দেওয়া ছবিতে দেখা যেত। তার থেকে অনেকে মোনালির বিয়ের খবর জানতে উৎসুক থাকতেন। কিন্তু মাইক এবং মোনালি দুজনেই অত্যন্ত সফল ভাবে তাঁদের বিয়ের খবর গোপন রেখেছিলেন।
আরও পড়ুন: টিভি থেকে সিনেমা এবং রাজনীতি চিরঞ্জিত সবেতে সফল
এবার আসা যাক আর একটি জনপ্রিয় বাংলা সংবাদপত্রের প্রসঙ্গে। তারিখ ১ আগস্ট ২০১৭। সেখানেও ছাপা হয়েছিল মোনালির একটি সাক্ষাৎকার। শুরুতে বিয়ে নিয়ে প্রশ্ন করা হয়েছিল। কিন্তু মোনালি বিয়ের খবর অস্বীকার করেছেন। বলেছিলেন, ‘বিয়ে নিয়ে এত বাড়াবাড়ির কি আছে? বিয়ে হলে জানাবেন।’ এমন কি বয়ফ্রেণ্ডের নাম পর্যন্ত বলতে চাননি। কেন এত গোপনীয়তা, সেটা মোনানিই বলতে পারবেন।
মোনালি শক্তি ঠাকুরের ছোট মেয়ে। জন সমক্ষে প্রথম আবির্ভাব গায়িকা রূপে। অভিনয় তার পরে। বাংলা টেলিভিশন ধারাবাহিক ‘আলোকিত এক ইন্দু’তে প্রথম অভিনয়। মুখ্য চরিত্র ইন্দুবালার ভূমিকায়। এরপর অভিনয় করেছেন আরও দু-একটি টেলিভিশন ধারাবাহিকে। এক দিন রাজা সেন প্রস্তাব দিলেন তাঁর ছবিতে অভিনয়ের জন্য। ছবির নাম ‘কৃষ্ণকান্তের উইল।’ মোনালিকে, রাজা সেন ভ্রমরের চরিত্রে ভেবেছিলেন।
বিনোদন
টিভি থেকে সিনেমা এবং রাজনীতি চিরঞ্জিত সবেতে সফল

দীপক ওরফে চিরঞ্জিত চক্রবর্তী বাংলা চলচ্চিত্রের এক সফল অভিনেতা এবং পরিচালক। তিনি প্রখ্যাত কার্টুনিস্ট শায়লা চক্রবর্তীর ছেলে। এছাড়াও তিনি একজন রাজনীতিবিদ এবং পশ্চিমবঙ্গ বিধানসভার সদস্য।
চলচ্চিত্র তালিকা
| সাল | চলচ্চিত্র/ ধারাবাহিক | চরিত্র | মন্তব্য/পুরস্কার |
| ১৯৮১ | সোনায় সোহাগা | অভিনেতা | |
| ১৯৮৯ | মর্যাদা | পরিচালক | |
| ১৯৯৪ | ফিরিয়ে দাও | পরিচালক | |
| ১৯৯৫ | কেঁচো খুঁড়তে কেউটে | অভিনেতা এবং পরিচালক | |
| ১৯৯৫ | সংসার সংগ্রাম | পরিচালক | |
| ১৯৯৬ | ভয় | পরিচালক | |
| ২০০০ | বস্তির মেয়ে রাধা | পরিচালক | |
| ২০০২ | মানুষ অমানুষ | পরিচালক | |
| ২০১৪ | চতুষ্কোণ | অভিনেতা | |
| ২০১৬ | ষড়রিপু | অভিনেতা | |
| ২০১৬ | কিরীটী রায় | কিরীটী রায় | অভিনেতা (নাম ভূমিকা) |
আরও পড়ুন: পদ্মিনীর নাচ দেখে রাজ কাপুর তাঁর ছবিতে অভিনয়ের প্রস্তাব দিয়েছিলেন
বিনোদন
নাচ দেখে রাজ কাপুর বলেছিলেন আমার ছবিতে অভিনয় করবে

ছোটবেলায় নাচতে ভালো লাগত। আশাজি সম্পর্কে মামি। মামির গান খুব পছন্দ। মামির গানে নাচতে দারুণ লাগে। নাচের মুদ্রা কিন্তু নিজস্ব। সে মুদ্রা কেউ শেখায়নি। গান আশাজির, স্টেপ নিজের। কোন এক অনুষ্ঠানে, পদ্মিনী এভাবেই নাচছিলেন। অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথি রাজ কাপুর। দেখছিলেন পদ্মিনীর নাচ। নাচ দেখে রাজ কাপুর বলেছিলেন আমার ছবিতে অভিনয় করবে। পদ্মিনীর তখন কি এমন বয়স। বলিষ্ঠ স্বরে বলেছিলেন, আমি তো অভিনয় করি। এই আত্মবিশ্বাস রাজের ভালো লেগেছিল। পদ্মিনী মনে করেন, সম্ভবত এই কারণে রাজ কাপুর তাঁকে ‘সত্যম শিবম সুন্দরম’ ছবিতে নিয়েছিলেন।
পিতা পন্ধরীনাথ কোলহাপুরী। মা নিরুপমা কোলহাপুরী। তিন বোনের মধ্যে পদ্মিনী কোলহাপুরী দ্বিতীয়। বড় বোন শিভাঙ্গী কোলহাপুরীকে বিয়ে করেছেন শক্তি কাপুর। ছোট বোন তেজস্বিনী কোলহাপুরীও হিন্দি চলচ্চিত্রে অভিনয় করেছেন।
পদ্মিনীর ঠাকুরদা পণ্ডিত কৃষ্ণ রাও কোলহাপুরী এবং লতাজি, আশাজির পিতা পণ্ডিত দীননাথ মঙ্গেশকর ‘বলবন্ত নাটক আকাদেমি’তে এক সাথে কাজ করেছেন। পদ্মিনীর মা নিরুপমা (পন্ধরীনাথের স্ত্রী) ছিলেন পণ্ডিত দীননাথ মঙ্গেশকরের সৎ বোন। সেই সূত্রে, পদ্মিনী আবার লতাজি এবং আশাজির ভাগ্নী।
আরও পড়ুন: ঋষিকেশ বহিরাগত হয়েও বলিউডে জায়গা করে নিয়েছিলেন
পদ্মিনীর মা নিরুপমা ছিলেন কোঙ্কণী ব্রাহ্মণ সন্তান। বসবাস ছিল কর্ণাটকের ম্যাঙ্গালোরে। বাবার তরফে, পদ্মিনীর পূর্ব পুরুষের বসবাস ছিল মহারাষ্ট্রের কোলহাপুরে। মূলত পিতৃ সূত্রে, পদ্মিনীর নামের সাথে যুক্ত হয়েছে কোলহাপুর।
মধ্যবিত্ত মহারাষ্ট্রীয় কোঙ্কণী পরিবারের সন্তান, পদ্মিনীর ছোট বেলা কেটেছে প্রবল দারিদ্রের মধ্যে। পদ্মিনী দেখেছে, সংসার চালাতে বাবা কেমন হিমশিম খেতেন। আয় বাড়াতে, পন্ধরীনাথ গান শেখাতে শুরু করেছিলেন। তাতে অবশ্য সংসারের হাল ফিরেছিল। তবে তা সেরকম কিছু নয়।

