স্বাস্থ্য
পিঠোপিঠি রোগশয্যা এবং কফিন, কলম্বিয়ার অভিনব আবিষ্কার
![]() |
![]() |
স্বাস্থ্য
মূকের জন্য মুখোশ তৈরি করেছেন লরেন্স
লকডাউনের মধ্যে, নিঃশব্দে বিপ্লব ঘটিয়েছেন অ্যশলে লরেন্স। মুখের নানাবিধ ভঙ্গীর সাথে ঠোঁটের নড়াচড়া দেখতে পাওয়া মূক ও বধিরদের ক্ষেত্রে কতটা জরুরী, তাদের নিয়ে পঠনরত ইস্টার্ন কেনটাকি বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রী, লরেন্স সেটা খুব ভাল করে জানতেন। রুগী থেকে শুরু করে চিকিৎসক অথবা স্বাস্থ্যকর্মী, এদের মধ্যে যে কেউ মূক ও বধির হলে, ভাবের আদানপ্রদান কঠিন হয়ে পড়ে।
একুশ বছর বয়সী লরেন্স অনুভব করেন, এই বিশেষ মানুষদের জন্য এমন মুখোশ তৈরি হওয়া জরুরী যাতে বাইরে থেকে তাদের ঠোঁট দেখতে পাওয়া যায়। আমরা কথায় কথায় বলি, ঠিক করে দেখলে, মুখ ও চোখের ভাষা পড়া যায়। ‘বডি ল্যাঙ্গোয়েজ’ কথাটি আজকাল অনেক ক্ষেত্রে ব্যবহৃত হয়। কর্পোরেট অফিস হোক বা খেলার মাঠ, শরীরি ভাষা পড়তে, অভিজ্ঞ ব্যক্তির চোখ ভুল করে না।
কিছুটা একই রকম ভাবে বিশ্বের মোট জনসংখ্যার প্রায় পাঁচ শতাংশ মানুষের কাছে, সঠিক ভাবে যোগাযোগ রক্ষা করতে ‘লিপ রিডিং’ খুব জরুরী। জন্মগত যারা অন্যের কথা শোনার ক্ষমতা রহিত অর্থাৎ যারা জন্মাবধি বধির অথবা কোন কারণে শ্রবণ সমস্যায় আক্রান্ত, তাদের কাছে এটা ভীষণ তাৎপর্যপূর্ণ।
মারণ ভাইরাস ঠেকাতে লকডাউন আর তার কারণে, মুখোশের আড়ালে চাপা পড়ে গেছে মানুষের ঠোঁট। ঠিক এই জায়গায় দাঁড়িয়ে অ্যাশলে কল্পনা করলেন এক স্বচ্ছ মুখোশের নকশা। এমন এক নকশা যেখানে মূল মুখোশের মধ্যে কিছুটা জায়গা যেটা সাধারণ মুখোশের ক্ষেত্রে ঠোঁট আড়াল করে, এখানে সেই জায়গাতে কোন স্বচ্ছ আবরণ ব্যবহার করে অ্যাশলের কল্পনা থেকে জন্ম নিল মূক ও বধিরদের জন্য বিশেষ ভাবে কার্যকরী এক স্বচ্ছ মুখোশ।
মেয়ের নকশা বাস্তবায়িত করতে এগিয়ে এলেন লরেন্সের মা। জানলার পর্দায় ব্যবহৃত স্বচ্ছ ফাইবার যা প্লাস্টিক থেকে তৈরি আর বিছানার চাদর, এই দুই ব্যবহার করে, দিনরাত পরিশ্রম করে মায়ের সেলাই মেশিন কাজে লাগিয়ে অ্যাশলে প্রায় একশো স্বচ্ছ মুখোশ তৈরি করলেন। তারপর সেগুলি পাঠিয়ে দেওয়া হল মূক ও বধির কিছু মানুষের কাছে। কিছু দিন অপেক্ষার পরে জানা গেল, স্বচ্ছ মুখোশগুলি দারুণ কাজ করছে।
এবার নতুন সমস্যা। এত কম মুখোশ দিয়ে যে সবাইকে সাহায্য করা যাবে না। দরকার আরও অনেক অনেক মুখোশ। কুছ পরোয়া নেই। সামাজিক গণমাধ্যমের সাহায্য নিয়ে অ্যাশলে হাত দিলেন গণতহবিল তৈরিতে। আরোপিত শর্ত একটাই। তা হল এই যে তহবিলে সংগৃহীত অর্থ কাজে লাগিয়ে যত মুখোশ তৈরি হবে, তার একটিও বিক্রি করা যাবে না। সফল হল গণতহবিল সংগ্রহ অভিযান।
গত দেড় সপ্তাহের মধ্যে আমেরিকার নানা প্রদেশে অগণিত মূক ও বধিরদের সাহায্যার্থে ব্যবহৃত হচ্ছে অ্যাশলে লরেন্সের নকশা করা স্বচ্ছ মুখোশ। আন্তর্জালে খুঁজলেই উঠে আসছে অ্যাশলে লরেন্সের নাম। একটি বিশেষ ইমেল আইডিতে চিঠি লিখলে, অ্যাশলে একটি টিউটোরিয়াল পাঠাচ্ছেন যা থেকে জানা যায় অ্যাশলের বক্তব্য যেখানে তিনি বলছেন, তাঁর ইচ্ছে বিশ্বের নানা প্রান্তে ছড়িয়ে থাকা মূক ও বধিরদের কাজ করে এমন অসংখ্য সংস্থা যেন এই টিউটোরিয়ালের সাহায্য নিয়ে স্বচ্ছ মুখোশ তৈরিতে হাত দেন। তাহলেই তিনি আশ্বস্ত হবেন এই ভেবে যে তাঁর নকশা ষোল আনা সফল হয়েছে।