বিনোদন
হৃষিকেশ মুখার্জি এত ছবি করলেন কেন একটা বাংলা ছবি করলেন না

তারিখটা ছিল ৬ ফেব্রুয়ারি। ১৯৫০ সালের সেদিনটিতে সারা বাংলার ঘরে ঘরে চলছিল স্বরস্বতী পুজো। আর সেই দিনটিতেই দু চোখের পাতায় ছবি বানানোর স্বপ্ন নিয়ে কলকাতা ছেড়ে পাঁচ বঙ্গ সন্তান মুম্বাইয়ের শহরে পা দিয়েছিলেন। পাঁচ জনের দলে ছিলেন অসিত সেন, লেখক তথা চিত্রনাট্যকার নবেন্দু ঘোষ, আজাদ হিন্দ ফৌজ ফেরত নাজির হোসেন এবং পল মহেন্দ্র। নাজির হোসেন এবং নবেন্দু ঘোষকে বাদ দিলে বাকি দুজন নিউ থিয়েটার্সে বিমল রায়ের সহকারী ছিলেন। শেষোক্ত মানুষটি ছিলেন হৃষিকেশ মুখার্জি যাকে ছাড়া বিমল রায়ের ছবির ফাইনাল প্রিন্ট ভাবাই যেত না। মানুষটি একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ কাজ করতেন। শুটিঙের যা কিছু বাড়তি শট, সব বাদ দিয়ে পরিচালক বিমল রায়ের নিখাদ ভাবনাটুকু ফুটিয়ে তুলতেন, ফিল্মের ভাষায় যাকে বলা হয়, এডিটিং।
হৃষিকেশ মুখার্জি নিউ থিয়েটার্সে বিমল রায়ের ছবির এডিটর ছিলেন
কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে রসায়নে বিএসসি করে হৃষিকেশ মুখোপাধ্যায় একটি স্কুলে অঙ্ক আর বিজ্ঞান পড়াতেন। ছাত্র পড়ানোর কাজ তাঁর ভাল লাগছিল না। সুযোগ পেয়ে মাস্টারির চাকরি ছেড়ে দিয়ে শিক্ষানবিশ ক্যামেরাম্যান হয়ে যোগ দিলেন নিউ থিয়েটার্স স্টুডিওতে। ক্যামেরায় হাত পাকানোর তালিম নিতে নিতে শিখতে লাগলেন চলচ্চিত্র সম্পাদনার কাজ। শিক্ষাগুরু ছিলেন সুবোধ মিত্র। বেশ চলছিল। হঠাৎ এসে গেল এক ঐতিহাসিক সন্ধিক্ষণ। অ্যাসিস্টান্ট ডাইরেক্টর কাম এডিটর হিসাবে টিম বিমল রায়ের সদস্য হয়ে পাড়ি দিলেন আরব সাগরের তীরে সুদূর মুম্বাইয়ে। তারপর যা হয়েছে পুরোটাই ইতিহাস। আমৃত্যু সিনেমা বানিয়েছেন বলিউডে, মোট বিয়াল্লিশটা। সব ছবিই হিন্দিতে, কিন্তু একটাও টিপিক্যাল বলিউডি নয়। তাঁর সব ছবি খাঁটি বাঙালিয়ানাতে আপাদমস্তক মোড়া থাকত।
আরও পড়ুনঃ ঋষিকেশ মুখার্জি বহিরাগত হয়েও বলিউডে জায়গা করে নিয়েছিলেন
একটু পিছনপানে চাইলে দেখা যাবে ছবি তৈরির ভাবনা, অনেক দিন ধরে পোষা ছিল হৃষিকেশ মুখোপাধ্যায়ের বুকে। ধর্মতলায় গণনাট্য সঙ্ঘের অফিস থেকে টালিগঞ্জ স্টুডিওপাড়া হয়ে কালীঘাটে প্যারাডাইস কাফেতে প্রায়ই আড্ডা মারতে আসতেন ঋত্বিক ঘটক, সলিল চৌধুরী, কালী ব্যানার্জি, মৃণাল সেন প্রমুখ। সময় সুযোগ বুঝে কলেজ স্ট্রিট কফি হাউসেও এদের ভিড় জমত। প্রায় প্রত্যেকের সঙ্গের ঝোলা ব্যাগে থাকত হয় গানের লাইন নয় খসড়া চিত্রনাট্য। এই সাংস্কৃতিক মানুষদের ভিড়ে হৃষিকেশ মুখোপাধ্যায়ও সামিল হতেন।
তখন মুম্বাইয়ে চলছে প্রথম আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসব। উৎসবে প্রদর্শিত একটি সিনেমা দেখে বিমল রায় অ্যান্ড কোম্পানির সবাইয়ে মুখে কুলুপ। কি ব্যাপার? না, অন্য কিছু নয়। সিনেমা দেখে সবাই মন্ত্রমুগ্ধ। এতটাই বাকরুদ্ধ যে মুখে কথা সরছে না। এরকম ছবি কিভাবে করা যাবে, সেই চিন্তা মাথায় ঘুরঘুর করছে। বিমল রায় সমাধান সূত্র দিলেন, নিজেদের ভাবনাকে অগ্রাধিকার দিতে হলে নিজেদের প্রোডাকশন হাউস খুলতে হবে। কুছ পরোয়া নেই। তাই হবে। অল্প দিনের মধ্যে হৃষিকেশ মুখোপাধ্যায়দের সঙ্গে যোগ দিয়েছিলেন সলিল চৌধুরী, ঋত্বিক ঘটক।
হৃষিকেশকে ভালবেসে দিলীপকুমার বিনা পারিশ্রমিকে মুসাফির ছবিতে অভিনয় করেছিলেন
ফিল্মফেয়ার পুরস্কার থেকে শুরু করে দাদাসাহেব ফালকে, পদ্মবিভূষণ – হৃষিকেশ মুখোপাধ্যায়ের প্রাপ্তির ঘরে অনেক কিছু এসেছে। তবে তাঁর জীবনে সব থেকে বড় প্রাপ্তি ছিল মানুষের ভালবাসা। তাঁকে সবাই ভালবাসতেন। চিত্রনাট্য শুনিয়েও আনন্দ ছবিতে ধর্মেন্দ্রকে বাদ দিয়ে রাজেশ খান্নাকে বেছে নিয়েছিলেন। প্রচণ্ড ক্ষুব্ধ ধর্মেন্দ্র সারা রাত ধরে ফোন করেছিলেন তাঁর ঋষিকেশদাকে। ভালবাসার টান না থাকলে এমন কি হয়? ঋত্বিক ঘটক গল্প ও চিত্রনাট্য লিখেছেন ঋষিকেশ মুখোপাধ্যায়ের হয়ে। সলিল চৌধুরী সঙ্গীত পরিচালনা করেছেন। শুধু ঋষিকেশ মুখোপাধ্যায়কে ভালবেসে মুসাফির ছবিতে সম্পূর্ণ বিনা পারিশ্রমিকে অভিনয় করেছেন দিলীপকুমার। এমন আরও কত উদাহরণ রয়েছে, বলতে শুরু করলে গুনে শেষ করা যাবে না। আমাদের বাঙালিদের শুধু একটাই আফশোস – এতগুলো ছবি বানালেন, একটা বাংলা ছবি কেন বানালেন না!
বিনোদন
মোনালি বলেছিলেন তিনি বিবাহিত কিন্তু সত্যি কি তাই

জন্ম ০৩ নভেম্বর ১৯৮৫
কলকাতা পশ্চিমবঙ্গ ভারত
পিতা শক্তি ঠাকুর
মাতা মিনতি ঠাকুর
দিদি মেহুলি ঠাকুর
জীবন সঙ্গী মাইখ রিখটার (অসমর্থিত)
সাল ২০২০। একটি জনপ্রিয় সর্ব ভারতীয় সংবাদপত্রের পাতা। সে পাতায় ছাপা হয়েছিল মোনালির একটি সাক্ষাৎকার। ২০২০ সালে প্রকাশিত সেই সাক্ষাৎকারে মোনালি স্বীকার করেছিলেন যে তিনি বিবাহিত। তার তিন বছর আগে অর্থাৎ ২০১৭ সালে তিনি নাকি বিয়ে করেছেন। পাত্র এক সুইডিশ রেস্তোরাঁ মালিক। নাম মাইক রিখটার।
২০১৭ থেকে ২০২০। তিন বছর মোনালি তাঁর বিয়ে গোপন করেছিলেন। না কোন সংবাদ মাধ্যম। না কোন সমাজ মাধ্যম। কোথাও প্রকাশিত হয়নি মোনালির বিয়ের খবর। বিয়ের আংটি কখনও ভুলবশত ইনস্টাগ্রামে দেওয়া ছবিতে দেখা যেত। তার থেকে অনেকে মোনালির বিয়ের খবর জানতে উৎসুক থাকতেন। কিন্তু মাইক এবং মোনালি দুজনেই অত্যন্ত সফল ভাবে তাঁদের বিয়ের খবর গোপন রেখেছিলেন।
আরও পড়ুন: টিভি থেকে সিনেমা এবং রাজনীতি চিরঞ্জিত সবেতে সফল
এবার আসা যাক আর একটি জনপ্রিয় বাংলা সংবাদপত্রের প্রসঙ্গে। তারিখ ১ আগস্ট ২০১৭। সেখানেও ছাপা হয়েছিল মোনালির একটি সাক্ষাৎকার। শুরুতে বিয়ে নিয়ে প্রশ্ন করা হয়েছিল। কিন্তু মোনালি বিয়ের খবর অস্বীকার করেছেন। বলেছিলেন, ‘বিয়ে নিয়ে এত বাড়াবাড়ির কি আছে? বিয়ে হলে জানাবেন।’ এমন কি বয়ফ্রেণ্ডের নাম পর্যন্ত বলতে চাননি। কেন এত গোপনীয়তা, সেটা মোনানিই বলতে পারবেন।
মোনালি শক্তি ঠাকুরের ছোট মেয়ে। জন সমক্ষে প্রথম আবির্ভাব গায়িকা রূপে। অভিনয় তার পরে। বাংলা টেলিভিশন ধারাবাহিক ‘আলোকিত এক ইন্দু’তে প্রথম অভিনয়। মুখ্য চরিত্র ইন্দুবালার ভূমিকায়। এরপর অভিনয় করেছেন আরও দু-একটি টেলিভিশন ধারাবাহিকে। এক দিন রাজা সেন প্রস্তাব দিলেন তাঁর ছবিতে অভিনয়ের জন্য। ছবির নাম ‘কৃষ্ণকান্তের উইল।’ মোনালিকে, রাজা সেন ভ্রমরের চরিত্রে ভেবেছিলেন।
বিনোদন
টিভি থেকে সিনেমা এবং রাজনীতি চিরঞ্জিত সবেতে সফল

দীপক ওরফে চিরঞ্জিত চক্রবর্তী বাংলা চলচ্চিত্রের এক সফল অভিনেতা এবং পরিচালক। তিনি প্রখ্যাত কার্টুনিস্ট শায়লা চক্রবর্তীর ছেলে। এছাড়াও তিনি একজন রাজনীতিবিদ এবং পশ্চিমবঙ্গ বিধানসভার সদস্য।
চলচ্চিত্র তালিকা
| সাল | চলচ্চিত্র/ ধারাবাহিক | চরিত্র | মন্তব্য/পুরস্কার |
| ১৯৮১ | সোনায় সোহাগা | অভিনেতা | |
| ১৯৮৯ | মর্যাদা | পরিচালক | |
| ১৯৯৪ | ফিরিয়ে দাও | পরিচালক | |
| ১৯৯৫ | কেঁচো খুঁড়তে কেউটে | অভিনেতা এবং পরিচালক | |
| ১৯৯৫ | সংসার সংগ্রাম | পরিচালক | |
| ১৯৯৬ | ভয় | পরিচালক | |
| ২০০০ | বস্তির মেয়ে রাধা | পরিচালক | |
| ২০০২ | মানুষ অমানুষ | পরিচালক | |
| ২০১৪ | চতুষ্কোণ | অভিনেতা | |
| ২০১৬ | ষড়রিপু | অভিনেতা | |
| ২০১৬ | কিরীটী রায় | কিরীটী রায় | অভিনেতা (নাম ভূমিকা) |
আরও পড়ুন: পদ্মিনীর নাচ দেখে রাজ কাপুর তাঁর ছবিতে অভিনয়ের প্রস্তাব দিয়েছিলেন
বিনোদন
নাচ দেখে রাজ কাপুর বলেছিলেন আমার ছবিতে অভিনয় করবে

ছোটবেলায় নাচতে ভালো লাগত। আশাজি সম্পর্কে মামি। মামির গান খুব পছন্দ। মামির গানে নাচতে দারুণ লাগে। নাচের মুদ্রা কিন্তু নিজস্ব। সে মুদ্রা কেউ শেখায়নি। গান আশাজির, স্টেপ নিজের। কোন এক অনুষ্ঠানে, পদ্মিনী এভাবেই নাচছিলেন। অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথি রাজ কাপুর। দেখছিলেন পদ্মিনীর নাচ। নাচ দেখে রাজ কাপুর বলেছিলেন আমার ছবিতে অভিনয় করবে। পদ্মিনীর তখন কি এমন বয়স। বলিষ্ঠ স্বরে বলেছিলেন, আমি তো অভিনয় করি। এই আত্মবিশ্বাস রাজের ভালো লেগেছিল। পদ্মিনী মনে করেন, সম্ভবত এই কারণে রাজ কাপুর তাঁকে ‘সত্যম শিবম সুন্দরম’ ছবিতে নিয়েছিলেন।
পিতা পন্ধরীনাথ কোলহাপুরী। মা নিরুপমা কোলহাপুরী। তিন বোনের মধ্যে পদ্মিনী কোলহাপুরী দ্বিতীয়। বড় বোন শিভাঙ্গী কোলহাপুরীকে বিয়ে করেছেন শক্তি কাপুর। ছোট বোন তেজস্বিনী কোলহাপুরীও হিন্দি চলচ্চিত্রে অভিনয় করেছেন।
পদ্মিনীর ঠাকুরদা পণ্ডিত কৃষ্ণ রাও কোলহাপুরী এবং লতাজি, আশাজির পিতা পণ্ডিত দীননাথ মঙ্গেশকর ‘বলবন্ত নাটক আকাদেমি’তে এক সাথে কাজ করেছেন। পদ্মিনীর মা নিরুপমা (পন্ধরীনাথের স্ত্রী) ছিলেন পণ্ডিত দীননাথ মঙ্গেশকরের সৎ বোন। সেই সূত্রে, পদ্মিনী আবার লতাজি এবং আশাজির ভাগ্নী।
আরও পড়ুন: ঋষিকেশ বহিরাগত হয়েও বলিউডে জায়গা করে নিয়েছিলেন
পদ্মিনীর মা নিরুপমা ছিলেন কোঙ্কণী ব্রাহ্মণ সন্তান। বসবাস ছিল কর্ণাটকের ম্যাঙ্গালোরে। বাবার তরফে, পদ্মিনীর পূর্ব পুরুষের বসবাস ছিল মহারাষ্ট্রের কোলহাপুরে। মূলত পিতৃ সূত্রে, পদ্মিনীর নামের সাথে যুক্ত হয়েছে কোলহাপুর।
মধ্যবিত্ত মহারাষ্ট্রীয় কোঙ্কণী পরিবারের সন্তান, পদ্মিনীর ছোট বেলা কেটেছে প্রবল দারিদ্রের মধ্যে। পদ্মিনী দেখেছে, সংসার চালাতে বাবা কেমন হিমশিম খেতেন। আয় বাড়াতে, পন্ধরীনাথ গান শেখাতে শুরু করেছিলেন। তাতে অবশ্য সংসারের হাল ফিরেছিল। তবে তা সেরকম কিছু নয়।

