বিনোদন
রবি ঘোষ কিংবদন্তী অভিনেতা কোর্টের চাকরি ছেড়ে সিনেমার পর্দায়

রবি ঘোষ কিংবদন্তী অভিনেতা, আদালতের চাকরি ছেড়ে দিয়ে চলে এসেছিলেন সিনেমার পর্দায়। ভাগ্যিস এসেছিলেন! বাংলা সিনেমা তাঁর অভিনয়ে দিনের পর দিন সমৃদ্ধ হয়েছে। কখনও কোনও বাধা তাঁকে দমিয়ে রাখতে পারেনি। ছিলেন পেশাদারিত্বের এক জলজ্যান্ত উদাহরণ। একদিন ‘ঠগিনী’ ছবির শুটিঙে, ফ্লোরে পৌঁছতে, অনেক দেরি হয়েছিল। দুপুরে লাঞ্চ ব্রেকের আগে পর্যন্ত কাজ চলেছিল একটানা। প্যাক-আপ হয়ে যাওয়ার পরে ইউনিটের সবাই জানতে পেরেছিল, সেদিন সকালেই মা-কে দাহ করে তিনি কাজে এসেছেন।
রবি ঘোষ কিংবদন্তী অভিনেতা বাংলা সিনেমার জগতে তাঁর জায়গা চির উজ্জ্বল
সাল উনিশশো উনষাট বছরের শেষ দিন। উৎপল দত্তের পরিচালনায় মিনার্ভা থিয়েটারে লিটল থিয়েটার গ্রুপ নিবেদিত ‘অঙ্গার’ নাটকের প্রথম শো। সেদিন থেকে শুরু করে নাটকের শেষ রজনী পর্যন্ত সে নাটকে অভিনয় করেছিলেন রবি ঘোষ। অঙ্গারের জন্য উনিশশো ষাট সালে উল্টোরথ পত্রিকা থেকে শ্রেষ্ঠ মঞ্চাভিনেতার পুরস্কার পেয়েছিলেন। প্রথম শোয়ের পাঁচ দিন আগে, পঁচিশে ডিসেম্বর বাবা মারা যান। তাঁর পেশাদারিত্ব এমন একটি পর্যায়ে ছিল যে ব্যক্তিগত সুখ-দুঃখ সরিয়ে রেখে বরাবর অভিনয়কে সামনে রাখতেন।
অভিনয় করার দোষে বহু বার বাড়ি থেকে বার করে দিয়েছিল। তবে সেসব করে কি আর অভিনয় বন্ধ করা যায়! ‘বন্ধুমন’ নামে একটি নাটকের দল গড়ে মহড়া দিতেন আশুতোষ কলেজের ছাদে। ছেলের অভিনয় করা, বাবা জিতেন্দ্রনাথ পছন্দ করতেন না। প্রায়ই স্ত্রী জ্যোৎস্নারানিকে বলতেন, “রবি অভিনয় কইরা সময় নষ্ট করে ক্যান? তোমার পোলারে কয়া দিও ওই চেহারায় অভিনয় হয় না। সে ছিল দুর্গাদাস বাঁড়ুজ্যে, হিরোর মতো চেহারা।” বাবার অমত থাকলেও, মা এবং বড়মামার সমর্থন থাকত পুরোপুরি।
স্বাতীলেখা সেনগুপ্ত বেলা শুরু আর হল না বেলা শেষে দিয়েই শেষ হল সব?
ব্যাঙ্কশাল কোর্টের চাকরি ছেড়ে অভিনয়কে পেশা করেছিলেন। অভিনেতার জীবন শুরু ‘সাংবাদিক’ নাটক দিয়ে। পরিচালক উৎপল দত্ত। নাট্যকার সিমোনোভের লেখা ‘দ্য রাশিয়ান কোয়েশ্চেন’ অবলম্বনে নাটকটি অনুবাদ করেছিলেন সরোজ দত্ত। বন্ধু, অভিনেতা সত্য বন্দ্যোপাধ্যায়ের পরামর্শে উৎপল দত্তের নাটকের দল লিটল থিয়েটার গ্রুপ-এর সংসস্পর্শে এসেছিলেন। নাটকে চরিত্রটা ছিল এক জন সংবাদপত্র বিক্রেতার। মঞ্চের এক দিক দিয়ে ঢুকে অন্য প্রান্ত দিয়ে বেরিয়ে যাওয়া। এই ছিল অভিনয়। সেদিন মাত্র তিরিশ সেকেন্ডের সেই অভিনয় দেখে মৃনাল সেন বুঝেছিলেন তাঁর অভিনয় দক্ষতা।
চাকরি ছেড়ে অভিনয়কে পেশা করেছিলেন রবি ঘোষের অভিনয় শুরু ‘সাংবাদিক’ নাটক দিয়ে
‘অঙ্গার’ নাটকে রবিবাবুর অভিনয় দেখে পরিচালক অরবিন্দ মুখোপাধ্যায় ‘কিছুক্ষণ’ এবং তপন সিংহ ‘হাঁসুলিবাঁকের উপকথা’র জন্য প্রস্তাব দিয়েছিলেন। তপন সিংহ তো রবিকে শুধু কমেডিয়ান হিসাবে দেখতেন না, দেখতেন চরিত্রাভিনেতা হিসাবে। তাঁর কথায়, “গোটা ভারতবর্ষে রবির মতো অসামান্য ক্ষমতাসম্পন্ন চরিত্রাভিনেতা বাস্তবিক খুঁজে পাওয়া কঠিন।” ‘হাঁসুলিবাঁকের উপকথা’র পরেই প্রস্তাব আসে সত্যজিত রায়ের ‘অভিযান’-এর জন্য। আর থেমে থাকতে হয়নি।
চিন্ময় রায় বলেছিলেন, উৎপল দত্তের ‘অঙ্গার’ নাটকে আমাদের প্রথম পরিচয়। তার পরে আমরা যে ছবিটা এক সাথে করি তা হল ‘গল্প হলেও সত্যি’। আমার প্রথম ছবি। ছোট একটা চরিত্রে অভিনয় করেছিলাম। রবিদা বললেন, চেহারাটা রোগা হলেও অভিনয়টা ছাড়িস না। পারলে বিকেলে আমার বাড়িতে চলে আসিস। সেই যে রবিদার বাড়িতে ঢুকলাম, সম্পর্ক ছিল শেষ দিন পর্যন্ত। দাদার কালীঘাটের বাড়িতে জমিয়ে আড্ডার সঙ্গে সত্যজিৎ রায় ও বিদেশি নানা ছবির গভীর আলোচনা হতো।
রবিদা এমন এক কমেডিয়ান ছিলেন যিনি ব্যাকরণ সম্মত অভিনয় করতেন। এমন কোনও ছবি নেই যেখানে তাঁকে বাড়াবাড়ি করতে দেখা গিয়েছে। ‘সাধু যুধিষ্ঠিরের কড়চা’ ছবিতে রবিদার সঙ্গে অভিনয় করে খুব খুশি হয়েছি। ‘অপরূপা’-সহ প্রায় আটটি ছবিতে এক সঙ্গে অভিনয় করি। কিন্তু এমনই ভাগ্য যে রবিদা যাত্রায় চলে যাওয়ায় পরের দিকে ওঁর সঙ্গে আর ছবি করা হয়ে ওঠেনি।
প্রথম স্ত্রী অনুভা গুপ্ত দ্বিতীয় স্ত্রী বৈশাখী পরিচয়ের পনেরো দিনের মধ্যে রবি ঘোষ বিয়ে করেছিলেন
সন্দীপ রায়ের কথায়, রবিকাকা এমন এক মানুষ ছিলেন, ছিলেন এমন এক অভিনেতা যিনি প্রায় আমাদের পরিবারের একজন হয়ে উঠেছিলেন। উনিশশো বাষট্টি সাল থেকে আমাদের পরিবারের সঙ্গে ওঁর পরিচয়। বাবা প্রথম দেখেন উৎপল দত্তের নাটকে। উৎপল দত্ত পরিচালিত ‘মেঘ’ ছবিতে রবিকাকার অভিনয় দেখে মুগ্ধ হয়ে যান। তাই বাবা ওঁকে নেন ‘অভিযান’-এর এক অদ্ভুত চরিত্র রামা-য়, যা দর্শক কোনও দিন ভুলবে না। বাবার বিভিন্ন ছবিতে রবিকাকা ফিরে ফিরে এসেছেন নানা চরিত্রে। অনেক ছবিতে ছোট ছোট চরিত্রেও অভিনয় করেছেন, কি অসাধারণ তার বিন্যাস!
প্রথম স্ত্রী অভিনেত্রী অনুভা গুপ্ত প্রয়াত হওয়ার দশ বছর পরে বিয়ে করেছিলেন। এক বন্ধুর বাড়িতে প্রথম আলাপ। প্রথম দর্শনে বৈশাখী দেবী নাকি খুব হেসেছিলেন তাঁকে দেখে। পরিচয়ের পরে মাত্র পনেরো দিনের মধ্যে বিয়ে। যখনই মজার ডায়লগ শোনানোর আবদার আসত, উল্টোদিক থেকে জবাব আসত, কেন ! আমি কি জোকার ? কমেডিয়ান বললে খুব রেগে যেতেন। বলতেন, ‘আমি এক জন চরিত্রাভিনেতা। কমেডিয়ান বলে আলাদা কোনও সংজ্ঞায় আমার বিশ্বাস নেই।‘ সংলাপ নয়, শারীরিক ভাবভঙ্গি দিয়ে যে হাস্যরস তৈরি হয়, সেই ‘স্ল্যাপস্টিক’ অভিনয়ে পৃথিবীর শ্রেষ্ঠতম অভিনেতা চার্লি চ্যাপলিনকে গুরু মেনে, বাপ-মায়ের দেওয়া বড়সড় নাম কেটেছেঁটে অভিনয় জগতে এসেছিলেন রবি ঘোষ।
বিনোদন
মোনালি বলেছিলেন তিনি বিবাহিত কিন্তু সত্যি কি তাই

জন্ম ০৩ নভেম্বর ১৯৮৫
কলকাতা পশ্চিমবঙ্গ ভারত
পিতা শক্তি ঠাকুর
মাতা মিনতি ঠাকুর
দিদি মেহুলি ঠাকুর
জীবন সঙ্গী মাইখ রিখটার (অসমর্থিত)
সাল ২০২০। একটি জনপ্রিয় সর্ব ভারতীয় সংবাদপত্রের পাতা। সে পাতায় ছাপা হয়েছিল মোনালির একটি সাক্ষাৎকার। ২০২০ সালে প্রকাশিত সেই সাক্ষাৎকারে মোনালি স্বীকার করেছিলেন যে তিনি বিবাহিত। তার তিন বছর আগে অর্থাৎ ২০১৭ সালে তিনি নাকি বিয়ে করেছেন। পাত্র এক সুইডিশ রেস্তোরাঁ মালিক। নাম মাইক রিখটার।
২০১৭ থেকে ২০২০। তিন বছর মোনালি তাঁর বিয়ে গোপন করেছিলেন। না কোন সংবাদ মাধ্যম। না কোন সমাজ মাধ্যম। কোথাও প্রকাশিত হয়নি মোনালির বিয়ের খবর। বিয়ের আংটি কখনও ভুলবশত ইনস্টাগ্রামে দেওয়া ছবিতে দেখা যেত। তার থেকে অনেকে মোনালির বিয়ের খবর জানতে উৎসুক থাকতেন। কিন্তু মাইক এবং মোনালি দুজনেই অত্যন্ত সফল ভাবে তাঁদের বিয়ের খবর গোপন রেখেছিলেন।
আরও পড়ুন: টিভি থেকে সিনেমা এবং রাজনীতি চিরঞ্জিত সবেতে সফল
এবার আসা যাক আর একটি জনপ্রিয় বাংলা সংবাদপত্রের প্রসঙ্গে। তারিখ ১ আগস্ট ২০১৭। সেখানেও ছাপা হয়েছিল মোনালির একটি সাক্ষাৎকার। শুরুতে বিয়ে নিয়ে প্রশ্ন করা হয়েছিল। কিন্তু মোনালি বিয়ের খবর অস্বীকার করেছেন। বলেছিলেন, ‘বিয়ে নিয়ে এত বাড়াবাড়ির কি আছে? বিয়ে হলে জানাবেন।’ এমন কি বয়ফ্রেণ্ডের নাম পর্যন্ত বলতে চাননি। কেন এত গোপনীয়তা, সেটা মোনানিই বলতে পারবেন।
মোনালি শক্তি ঠাকুরের ছোট মেয়ে। জন সমক্ষে প্রথম আবির্ভাব গায়িকা রূপে। অভিনয় তার পরে। বাংলা টেলিভিশন ধারাবাহিক ‘আলোকিত এক ইন্দু’তে প্রথম অভিনয়। মুখ্য চরিত্র ইন্দুবালার ভূমিকায়। এরপর অভিনয় করেছেন আরও দু-একটি টেলিভিশন ধারাবাহিকে। এক দিন রাজা সেন প্রস্তাব দিলেন তাঁর ছবিতে অভিনয়ের জন্য। ছবির নাম ‘কৃষ্ণকান্তের উইল।’ মোনালিকে, রাজা সেন ভ্রমরের চরিত্রে ভেবেছিলেন।
বিনোদন
টিভি থেকে সিনেমা এবং রাজনীতি চিরঞ্জিত সবেতে সফল

দীপক ওরফে চিরঞ্জিত চক্রবর্তী বাংলা চলচ্চিত্রের এক সফল অভিনেতা এবং পরিচালক। তিনি প্রখ্যাত কার্টুনিস্ট শায়লা চক্রবর্তীর ছেলে। এছাড়াও তিনি একজন রাজনীতিবিদ এবং পশ্চিমবঙ্গ বিধানসভার সদস্য।
চলচ্চিত্র তালিকা
| সাল | চলচ্চিত্র/ ধারাবাহিক | চরিত্র | মন্তব্য/পুরস্কার |
| ১৯৮১ | সোনায় সোহাগা | অভিনেতা | |
| ১৯৮৯ | মর্যাদা | পরিচালক | |
| ১৯৯৪ | ফিরিয়ে দাও | পরিচালক | |
| ১৯৯৫ | কেঁচো খুঁড়তে কেউটে | অভিনেতা এবং পরিচালক | |
| ১৯৯৫ | সংসার সংগ্রাম | পরিচালক | |
| ১৯৯৬ | ভয় | পরিচালক | |
| ২০০০ | বস্তির মেয়ে রাধা | পরিচালক | |
| ২০০২ | মানুষ অমানুষ | পরিচালক | |
| ২০১৪ | চতুষ্কোণ | অভিনেতা | |
| ২০১৬ | ষড়রিপু | অভিনেতা | |
| ২০১৬ | কিরীটী রায় | কিরীটী রায় | অভিনেতা (নাম ভূমিকা) |
আরও পড়ুন: পদ্মিনীর নাচ দেখে রাজ কাপুর তাঁর ছবিতে অভিনয়ের প্রস্তাব দিয়েছিলেন
বিনোদন
নাচ দেখে রাজ কাপুর বলেছিলেন আমার ছবিতে অভিনয় করবে

ছোটবেলায় নাচতে ভালো লাগত। আশাজি সম্পর্কে মামি। মামির গান খুব পছন্দ। মামির গানে নাচতে দারুণ লাগে। নাচের মুদ্রা কিন্তু নিজস্ব। সে মুদ্রা কেউ শেখায়নি। গান আশাজির, স্টেপ নিজের। কোন এক অনুষ্ঠানে, পদ্মিনী এভাবেই নাচছিলেন। অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথি রাজ কাপুর। দেখছিলেন পদ্মিনীর নাচ। নাচ দেখে রাজ কাপুর বলেছিলেন আমার ছবিতে অভিনয় করবে। পদ্মিনীর তখন কি এমন বয়স। বলিষ্ঠ স্বরে বলেছিলেন, আমি তো অভিনয় করি। এই আত্মবিশ্বাস রাজের ভালো লেগেছিল। পদ্মিনী মনে করেন, সম্ভবত এই কারণে রাজ কাপুর তাঁকে ‘সত্যম শিবম সুন্দরম’ ছবিতে নিয়েছিলেন।
পিতা পন্ধরীনাথ কোলহাপুরী। মা নিরুপমা কোলহাপুরী। তিন বোনের মধ্যে পদ্মিনী কোলহাপুরী দ্বিতীয়। বড় বোন শিভাঙ্গী কোলহাপুরীকে বিয়ে করেছেন শক্তি কাপুর। ছোট বোন তেজস্বিনী কোলহাপুরীও হিন্দি চলচ্চিত্রে অভিনয় করেছেন।
পদ্মিনীর ঠাকুরদা পণ্ডিত কৃষ্ণ রাও কোলহাপুরী এবং লতাজি, আশাজির পিতা পণ্ডিত দীননাথ মঙ্গেশকর ‘বলবন্ত নাটক আকাদেমি’তে এক সাথে কাজ করেছেন। পদ্মিনীর মা নিরুপমা (পন্ধরীনাথের স্ত্রী) ছিলেন পণ্ডিত দীননাথ মঙ্গেশকরের সৎ বোন। সেই সূত্রে, পদ্মিনী আবার লতাজি এবং আশাজির ভাগ্নী।
আরও পড়ুন: ঋষিকেশ বহিরাগত হয়েও বলিউডে জায়গা করে নিয়েছিলেন
পদ্মিনীর মা নিরুপমা ছিলেন কোঙ্কণী ব্রাহ্মণ সন্তান। বসবাস ছিল কর্ণাটকের ম্যাঙ্গালোরে। বাবার তরফে, পদ্মিনীর পূর্ব পুরুষের বসবাস ছিল মহারাষ্ট্রের কোলহাপুরে। মূলত পিতৃ সূত্রে, পদ্মিনীর নামের সাথে যুক্ত হয়েছে কোলহাপুর।
মধ্যবিত্ত মহারাষ্ট্রীয় কোঙ্কণী পরিবারের সন্তান, পদ্মিনীর ছোট বেলা কেটেছে প্রবল দারিদ্রের মধ্যে। পদ্মিনী দেখেছে, সংসার চালাতে বাবা কেমন হিমশিম খেতেন। আয় বাড়াতে, পন্ধরীনাথ গান শেখাতে শুরু করেছিলেন। তাতে অবশ্য সংসারের হাল ফিরেছিল। তবে তা সেরকম কিছু নয়।

